মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠক করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনির।
এই বছরের গ্রীষ্মের শুরুতে ট্রাম্প মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের জন্য আতিথ্য দেওয়ার পর এটি তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের এই দুই নেতাকে মহান নেতা বলে অভিহিত করেন। এই প্রশংসা যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, আমাদের কাছে একজন মহান নেতা আসছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং ফিল্ড মার্শাল। ফিল্ড মার্শাল একজন খুবই মহান ব্যক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীও তাই। দুজনেই আসছেন এবং তারা হয়তো এই মুহূর্তে এই কক্ষেই আছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস পুল অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শরিফের মোটরগাড়ি বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে হোয়াইট হাউসে পৌঁছায়। এনডিটিভি জানিয়েছে, দুই পাকিস্তানি নেতাকে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। হোয়াইট হাউসের প্রেস পুলের ছবিতেও দেখা গেছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর পূর্বনির্ধারিত কাজ শেষ করার সময় মুনির ও শরিফ অপেক্ষা করছেন।
ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে মূলত কৌশলগত নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে দেখলেও বিশেষ করে আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারিত্ব এবং পরবর্তীকালে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানে খুঁজে পাওয়ার পর সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।
২০১৮ সালে ট্রাম্প নিজেও ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা পাকিস্তানকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিচ্ছি, অথচ তারা সেই সন্ত্রাসীদেরই আশ্রয় দিচ্ছে যাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি... পাকিস্তানের জন্য এখন সভ্যতা, শৃঙ্খলা এবং শান্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি দেখানোর সময় এসেছে।
কিন্তু এখন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের নতুন প্রস্তাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, যার ফলে মার্কিন বাজারে পাকিস্তানি আমদানির উপর ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য হবে। পাশাপাশি, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান তার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও বিরল মৃত্তিকা উপাদান যুক্তরাষ্ট্রকে সরবরাহ করবে। একটি মার্কিন সংস্থা পাকিস্তানি খনিজে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। এর আগে ট্রাম্প পাকিস্তানের বিশাল তেল সঞ্চয় উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেছিলেন।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১০.১ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৬.৩ শতাংশ বেশি।
সম্পর্কের উষ্ণতার আরও একটি কারণ হিসেবে অনেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেকার সামরিক সংঘাত নিরসনে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপকে কৃতিত্ব দেওয়ায় ঘটনাটিকে উল্লেখ করছেন। পাকিস্তান এই যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব ট্রাম্পকে দেওয়ায় পরে তাকে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতও করে, যা ভারতের পক্ষ থেকে বারবার অস্বীকার করা হয়েছে।
সম্প্রতি কয়েক মাসের মধ্যে ওয়াশিংটন মুনিরকে তিনবার আতিথ্য দিয়েছে, বিশেষত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সামরিক সংঘাতের পর। এটিই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তান এখন নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল