শেরপুর জেলা শহরের পৌর এলাকার সাতানি পাড়া মহল্লায় বসবাসরত হিন্দু আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের নারীরা মুষ্টির চাল জমিয়ে গড়ে তুলেছেন এক অভিনব দুর্গাপূজা আয়োজন। প্রতিদিন রান্নার সময় বাঁচানো এক মুঠো চাল বিক্রি করে জমে ওঠা টাকায় এবার জাঁকজমকভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত বছর প্রথমবারের মতো “উমা সংঘ” নামে নারী সংগঠনটি ছোট পরিসরে দুর্গাপূজা করে। এ বছর ২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ নারী কমিটি গঠন করে তারা আগেভাগেই প্রস্তুতি নেয়। জানা গেছে, মহল্লার ৪২টি ঘর থেকে প্রতিদিন মুষ্টির চাল সংগ্রহ করা হয়। বিক্রির টাকায় প্রতি মাসে ঘরপ্রতি ২০০ টাকা সঞ্চয় হয়। বছর শেষে জমা হয় ৬০ হাজার টাকা। একটি পূজার ব্যয় এক লাখ টাকার বেশি হওয়ায় বাকি অর্থ এসেছে শুভাকাঙ্ক্ষী, স্থানীয় ও শহরের অর্থশালী ব্যক্তি, সরকারি সহায়তা এবং পৌরসভার সহযোগিতা থেকে।
ইতোমধ্যেই প্রতিমা, সাজসজ্জা, গেট নির্মাণ, আলোকসজ্জা ও পূজার অন্যান্য প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজার কার্যক্রম শুরু হবে। পূজার কাজে নারীদের পাশাপাশি পুরুষ ও তরুণ-তরুণীরাও সহযোগিতা করছে।
উমা সংঘের সভাপতি মুক্তি বিশ্বাস বলেন, “মা দেবী নারী শক্তির প্রকাশ। আমরাও পারি এমন প্রতিজ্ঞা থেকে মুষ্টির চাল জমিয়ে পূজার আয়োজন করছি। গতবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার আরও বড় পরিসরে প্রস্তুতি নিয়েছি।”
সাধারণ সম্পাদক সুমিতা বিশ্বাস বলেন, “আমাদের পূজায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র—সবাই সহযোগিতা করছে। আগামীতেও মুষ্টির চাল দিয়ে পূজা চালিয়ে যাব।”
স্থানীয় আদিবাসী নেতা বিদ্বান বিশ্বাস বলেন, “একজনের সামর্থ্য না থাকলেও সবাই মিলে উদ্যোগ নিলে সমাজে উৎসাহ তৈরি হয়।”
শেরপুর জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি জিতেন্দ্র মজুমদার বলেন, “উমা সংঘের পূজার আয়োজন দেখে আমরা মুগ্ধ। তাই অন্যান্য মণ্ডপের তুলনায় তাদের বরাদ্দ কিছুটা বেশি রেখেছি। নিরাপত্তা ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। নারীদের এই উদ্যোগ নারী শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জাগায়।”
বিডি প্রতিদিন/আশিক