পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন। শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ১৪০ বছরের পুরোনো গ্লোরিয়া ফিউনিকুলার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। জরুরি পরিষেবা সূত্রে জানা গেছে, এই দুর্ঘটনায় আরও ১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনাটি ঘটে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন, তবে তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
লিসবনের মেয়র কার্লোস মোয়েদাস বুধবার রাতে হাসপাতাল পরিদর্শনে যান এবং এই ঘটনাকে শহরের জন্য একটি মর্মান্তিক মুহূর্ত বলে অভিহিত করেন। পর্তুগাল সরকার এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে।
দেশের প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সৌসা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং সংহতি প্রকাশ করেছেন।
দুর্ঘটনার পর পরই পুলিশ ও অন্যান্য জরুরি কর্মীরা ঘটনাস্থলে দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধার কাজ চালান। এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ফিউনিকুলার পরিচালনাকারী সংস্থা, জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ এবং অপরাধ তদন্ত পুলিশ পৃথক পৃথক তদন্ত শুরু করেছে।
লিসবনের গণপরিবহন সংস্থা ক্যারিসের প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিউনিকুলারের চার বছরের প্রধান রক্ষণাবেক্ষণ এবং দুই বছরের অন্তর্বর্তী রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত করা হয়েছিল, পাশাপাশি প্রতিদিন, সাপ্তাহিক এবং মাসিক নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হতো।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ফিউনিকুলারের ব্রেকিং সিস্টেম বিকল হয়ে যাওয়ায় এটি দ্রুত গতিতে একটি খাড়া রাস্তা ধরে নামতে থাকে এবং একটি ভবনে সজোরে ধাক্কা মারে। কর্তৃপক্ষের মতে, ট্রেনের ধ্বংসাবশেষের ভেতরে আটকে পড়া বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করতে হয়েছে।
ঠিক কতজন যাত্রী ট্রেনে ছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হলুদ রঙের ট্রেনটি উল্টে গিয়ে প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে এবং চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী পর্তুগিজ সংবাদপত্র অবসার্ভাদোরকে বলেন, ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণহীন ছিল।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী পর্তুগিজ টিভি চ্যানেল এসআইসিকে বলেন, ট্রেনটি পূর্ণ গতিতে একটি খাড়া রাস্তা দিয়ে নামছিল এবং বর্বর শক্তিতে একটি ভবনে ধাক্কা মারে, যার ফলে এটি কার্ডবোর্ডের বাক্সের মতো ভেঙে পড়ে।
লিসবন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনই দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে অবসার্ভাদোরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্ভবত রেলওয়ের একটি কেবল আলগা হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে ট্রেনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি ভবনের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল