ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালত।
সিন্ধু পানি চুক্তি ইস্যুতে হেগের পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের (পিসিএ) ‘পরিপূরক এখতিয়ার রায়’ জারির সিদ্ধান্তকে শুক্রবার স্বাগত জানায় পাকিস্তান।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তান বলেছে, দ্য হেগ আদালতের পরিপূরক রায়ে ভারতের একতরফা পদক্ষেপকে পাশ কাটানো যাবে না, সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে সালিস প্রক্রিয়া অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। রায়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, ভারত একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত করতে পারে না।
পিসিএ নিয়ম অনুযায়ী, পরিপূরক রায় হলো আদালত বা সালিসি ট্রাইব্যুনালের প্রাথমিক রায়ের পর একটি অতিরিক্ত সিদ্ধান্ত, যা সাধারণত অসম্পূর্ণ কোনো বিষয় সমাধান বা এখতিয়ার, ব্যাখ্যা বা কোনও চুক্তির অর্থ স্পষ্ট করতে জারি করা হয়।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ তুলে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। পাকিস্তান তখন জানায়, তার পানির অংশ স্থগিতের চেষ্টা ‘যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য’ এবং সিন্ধু পানি চুক্তিতে একতরফা স্থগিতের কোনও সুযোগ নেই। পরে পাকিস্তান ১৯৬৯ সালের ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পিসিএ’র রায়কে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারত সিন্ধু পানি চুক্তির বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নিলেও আদালত তার এখতিয়ার নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে হেগের পিস প্যালেসে অনুষ্ঠিত শুনানির পর প্রথম ধাপের মেরিটসের ওপর আদালতের রায় পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পাকিস্তান।”
পাকিস্তান সরকারের মতে, এই পর্যায়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো- ভারত-পাকিস্তান অর্থবহ সংলাপের পথে ফিরে আসা, যার মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, “জম্মু ও কাশ্মীর, পানি, বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদসহ সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপে বসতে প্রস্তুত।”
অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) ‘পিসিএ’র পরিপূরক রায় সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- ভারত এই আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না।
মন্ত্রণালয়ের ভাষায়, “ভারত কখনও এই কথিত সালিসি আদালতের আইনগত অস্তিত্ব স্বীকার করে না। আমাদের অবস্থান সবসময়ই ছিল- এই সালিসি ট্রাইব্যুনালের গঠন সিন্ধু পানি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন এবং এই ফোরামে যেকোনও কার্যক্রম ও রায় অবৈধ ও বাতিল।”
পেহেলগাঁও হামলার পর ভারত ‘সার্বভৌম অধিকার’ প্রয়োগ করে পাকিস্তানের ‘সীমান্ত পারাপারের সন্ত্রাসে সমর্থন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত’ সিন্ধু চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। ভারতের ভাষায়, আদালতের সাম্প্রতিক ঘোষণাগুলো ‘পাকিস্তানের ইশারায় পরিচালিত প্রহসন’।
‘চুক্তি বহাল রয়েছে’
পিসিএ প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করতে বা ‘স্থগিতাবস্থায়’ রাখতে পারবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আদালত প্রথমে সিন্ধু পানি চুক্তির শর্তাবলী পর্যালোচনা করে, যেখানে একতরফাভাবে স্থগিত বা স্থগিতাবস্থায় রাখার কোনও সুযোগ নেই। বরং চুক্তি তখন পর্যন্ত বহাল থাকে, যতক্ষণ না ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সম্মতিতে তা বাতিল করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “চুক্তির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনুযায়ী এর শর্তাবলী পড়ে আদালত সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, কোনও পক্ষ একতরফাভাবে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া স্থগিত বা স্থগিতাবস্থায় রাখতে পারবে না। তা করলে ‘বাধ্যতামূলক তৃতীয় পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা ও গুরুত্ব’ ক্ষুণ্ন হবে।”
আদালত শুনানিতে উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক আইনের যেকোনও ব্যাখ্যা বা ন্যায্যতা দেখিয়ে ভারত যে অবস্থানই নিক না কেন, তাতে সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত রাখার সুযোগ নেই। সূত্র: ডন নিউজ, দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, দ্য ইকোনমিক টাইমস
বিডি প্রতিদিন/একেএ