শুধু মাঠের লড়াই নয়, একসময়ের ঘরোয়া ফুটবলে দলবদলেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ত। বিশেষ করে মোহামেডান ও আবাহনীর দলবদল ঘিরে স্টেডিয়ামে যে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হতো তা সামাল দিতে পুলিশ হিমশিম খেত। কতই না অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এখন তো দলবদল ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ নেই। অথচ অতীতে দলবদলের সময় তারকা খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হতো, যদি কোনো খেলোয়াড়কে তুলে নিয়ে জোর করে সই করায়। সেসব এখন অতীত। দলবদল চলছে বড্ড নিরুত্তাপভাবে। আগে তিন বা বড়জোর পাঁচ দিন দলবদল চলত। এখন দীর্ঘ সময় হলেও কোনো সাড়া নেই। আসন্ন মৌসুমের দলবদল গতকালই শেষ হয়েছে। ২০২৪-২৫ পেশাদার লিগের পর্দা নেমেছিল ২৯ মে। ১ জুন শুরু হয় নতুন মৌসুমের দলবদলের কার্যক্রম। ৭৫ দিন খেলোয়াড়রা ঘরবদলের সুযোগ পেয়েছেন। এত দিনে দলবদল ঘিরে কোনো হইচই কি চোখে পড়েছে? দলবদল যে হচ্ছে অনেকে জানেনই না।
যাক, দলবদল সরব বা নীরব হোক, ক্লাবগুলো তো বসে থাকতে পারে না। পছন্দের খেলোয়াড়দের যেমন ধরে রেখেছে, নতুনদেরও দলে টেনেছে। ঘরবদলের পালার পর ঘরোয়া আসর এখন মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায়। মূলত শীর্ষ দলগুলো নিয়েই আলোচনা হয় কার শক্তি বাড়ল বা কমল। মাঝারি মানের দলগুলোও তারকা ভিড়িয়ে আলোচনায় থাকে। কেমন হলো এবারের দলবদল? কার শক্তি বাড়ল বা কমণ এ নিয়ে বিশ্লেষণ হবেই। গতবারই ঢাকা মোহামেডান পেশাদার লিগে প্রথম শিরোপা জিতেছিল। ২৩ বছর পর লিগে হারানো গৌরব উদ্ধার। এতে তো সমর্থকরা আশা করতেই পারেন তাঁদের দল সাফল্য ধরে রাখতে নতুন মৌসুমে শক্তি বাড়াবে। হয়েছে উল্টোটা। গতবারের চেয়ে বরং সাদা-কালোদের শক্তি কমেছে। যদিও অধিকাংশ লোকালকে ধরে রেখেছে। কিন্তু প্রথমবার মোহামেডানের লিগ জয়ের পেছনে চার বিদেশিরই বড় ভূমিকা ছিল। তাঁদের মধ্যে দিয়াবাতে, সানডে ও টনি দল ছেড়ে গেছেন। মোজাফফরভ আছেন, নতুন হিসেবে যোগ দিয়েছেন গতবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা বোয়াটেং। সেই সঙ্গে ঘানা থেকে এসেছেন দুজন। এঁরা কতটুকু জ্বলে উঠবেন দেখার বিষয়। লোকালদের মধ্যে নতুন সুমন রেজা ও রহমত মিয়া। আছেন বয়সভিত্তিক দলের তিন ফুটবলার। অর্থসংকটে মোহামেডান ভালো মানের দল গড়তে পারেনি। এ বক্তব্য ক্লাব কর্মকর্তাদেরই। কিন্তু গতবারে তৃতীয় হওয়া বসুন্ধরা কিংস ও রানার্সআপ আবাহনীর শক্তি বেড়েছে বললেও ভুল হবে না। হৃদয়, শাহরিয়ার ইমন ও বিদেশি ফুটবলার রাফায়েল দল ছাড়লেও শেখ মোরসালিন, আল আমিন, কাজিম শাহ ও সুলেমান দিয়াবাতে আসায় সেই ক্ষতি ভালোভাবে পুষিয়ে নিয়েছে আবাহনী। বসুন্ধরা কিংস কেমন দল গড়েছে তা এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগেই প্রমাণ দিয়েছে। মোহামেডানের সানডেকে এনে তারা যে ভুল করেনি তা কাতার ম্যাচে তাঁর জয়সূচক গোলই প্রমাণ দিচ্ছে। অন্য তিন বিদেশি হচ্ছেন টনি, রাফায়েল ও দুই বছর আগে খেলে যাওয়া ডরিয়েলটন। বড় চমক নিঃসন্দেহে কিউবা মিচেল। লোকাল কালেকশন হৃদয়, ইমন, তানভীর, তাজউদ্দিন ও জীবন। সব মিলিয়ে কিংস কিংরূপেই থাকছে বলা যায়। তিন সেরার পর ফর্টিস এফসি, পুলিশ ও রহমতগঞ্জ চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো দল গড়েছে এই যা। এবার দলবদলে নতুনত্ব হচ্ছে সার্কভুক্ত দেশের ফুটবলাররা দেশি কোটায় খেলবেন! ফর্টিস, পুলিশ ও রহমতগঞ্জ এ তিন দল শ্রীলঙ্কা ও নেপালের খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে। বিদেশি হয়েও কেন তাঁরা দেশি কোটায় খেলবেন, এ নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না।