বাগেরহাটে আবারও জোয়ার এসেছে আখ চাষে। অনুকূল আবহাওয়া, মাটির লবণাক্ততা হ্রাস এবং কৃষক ও তরুণদের নতুন আগ্রহে এ জেলার কৃষিতে ফিরে এসেছে পুরোনো ঐতিহ্য। একসময় জেলার সর্বত্র আখ চাষ প্রচলিত ছিল। তবে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে চাষ ধীরে ধীরে কমে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাল ও নদী খনন এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে লবণাক্ততা কমে যাওয়ায় কৃষক আবার আখ চাষে মনোযোগ দিচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ২৯৬ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২,২৬৫ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশ আখ কাটা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর, মোল্লাহাটে ৮০, রামপালে ১, ফকিরহাটে ২০, কচুয়ায় ৯৬, মোরেলগঞ্জে ৬০, শরণখোলায় ৩০ এবং চিতলমারীতে ৪ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। চাষি নজমুল শেখ জানান, দুই একর জমিতে ২ লাখ টাকা খরচ করে ৪ লাখ টাকার আখ বিক্রি করেছি। একইভাবে মিজানুর রহমান এক একর জমিতে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করে ২ লাখ টাকা আয় করেছেন। তবে তারা অভিযোগ করেছেন, কোনো সরকারি প্রণোদনা, কৃষিঋণ বা সার সহায়তা পাচ্ছেন না।
কৃষক মুকুল শেখ বলেন, আখ লাভজনক হলেও শ্রম বেশি লাগে। এখন দিনমজুরের মজুরি ৮০০ টাকা। আখ চাষ বাগেরহাটের সংস্কৃতির অংশও বটে। একসময় এখানকার হাতে তৈরি খেজুর গুড় ও আখের রস সারা দেশে জনপ্রিয় ছিল। কচুপট্টি, তালেশ্বর ও বধাল বাজারে গুড়ের জমজমাট বেচাকেনা চলত। বাগেরহাট সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অনুপ কুমার বিশ্বাস জানান, আখের রস জন্ডিস রোগীদের জন্য উপকারী। বাগেরহাট কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, সরকার আখ চাষে সহায়তা দিচ্ছে; কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে চাষিদের সহযোগিতা করছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যে সময় বাগেরহাটের গুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হতো, সেই সোনালি যুগ আবার ফিরবে। কৃষিনির্ভর আখ চাষিরা এখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নতুন স্বপ্ন দেখছে।