মাদারীপুরে শিশু হত্যার জন্য পূর্বে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাজাপ্রাপ্ত সাজ্জাদ হোসেন (৫০) আবারও এক নির্মম হত্যা সংঘটিত করেছেন। মাদ্রাসাছাত্রী দীপ্তিকে ধর্ষণের পর হত্যা করার কারণে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকের সাজ্জাদকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছেন। সাজ্জাদ হোসেন পূর্ব খাগদী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদারীপুর শহরের পূর্ব খাগদী এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন নিহতের বাবা মজিবর ফকির লাশ শনাক্ত করেন এবং জানান, এটি তার মেয়ে দীপ্তি (১৫)। মাদারীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৮ তদন্তে নামে। তদন্তে উঠে আসে ভয়াবহ সত্য—ইজিবাইক চালক সাজ্জাদ হোসেনই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়ক।
তদন্তে জানা যায়, সাজ্জাদ হোসেন ১৯৯২ সালে শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১১ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ইজিবাইক চালক হিসেবে জীবিকা শুরু করেন। কিন্তু পুরোনো অপরাধ প্রবণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সাজ্জাদ হোসেন তার অপরাধের বিস্তারিত স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ইজিবাইক থেকে তাকে জোরপূর্বক নামানোর চেষ্টা করি। চিৎকার করলে নাক-মুখ চেপে ধরি। সে নিস্তেজ হয়ে গেলে ঘরে তুলে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন করি। এরপর তার মৃত্যু ঘটে। তখন পেট কেটে শরীরে ইট বেঁধে পাশের পুকুরে ফেলে দিই।’ এই স্বীকারোক্তি আদালতের নথিতে সংযুক্ত করা হয়, যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দীপ্তির বাবা মজিবর ফকির রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যাকারী আইনের কাছে জবাবদিহি করেছে। আশা করি রায় দ্রুত কার্যকর হবে।’
মামলার সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট শরীফ সাইফুল কবীর বলেন, ‘দীপ্তিকে হত্যার ঘটনা ছিল মর্মান্তিক ও ঘৃণ্য। একজন ব্যক্তি যাবজ্জীবন সাজা ভোগের পরও খুন করেছে। এটি সমাজের জন্য সতর্কবার্তা। আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।’
নিহত দীপ্তি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরনচনা গ্রামের মজিবর ফকিরের মেয়ে এবং বলাইরচর শামসুন্নাহার বালিকা মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল