বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে মালটা চাষে যুবক মাসুদ রানার বাজিমাত। লেখাপড়া শিখে তিনি চাকুরীর পিছনে না ছুটে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। এই উদ্যোক্তা কৃষিতে সফলতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখন মাল্টা চাষে ভাগ্যবদলের হাতছানি দিচ্ছে তাকে। তিন বিঘা জমিতে বছরে ৬ লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছেন যুবক মাসুদ রানা। খরচের দ্বিগুণ দামে মাল্টা বিক্রি হওয়ায় মুনাফাও ভালো। তার দেখাদেখি মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এলাকার অন্য যুবকেরা।
মালটার পাশাপাশি তিনি পেয়ারা, সবজি, লেবুসহ নানা ধরনের অর্থকরী ফসল চাষ করেছেন। যেখান থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন।
জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মোন্না পাড়া গ্রামের মৃত সুরুতজ্জামানের ছেলে মাসুদ রানা। স্নাতক পাশ করে প্রথমে তিনি একটি কোম্পানিতে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু এই চাকরির আয় দিয়ে তার সংসার চলতো না। পরে ইউটিউব দেখে একজন কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। এরপর চাকরি ছেড়ে তিনি কৃষিকাজ শুরু করেন। প্রথমে তিনি তিন বিঘা জমিতে মালটা চাষ করেন। চাষের দুই বছর পর থেকে তার মালটার বাগানে পুরোপুরি ফলন শুরু হয়। এই উদ্যোক্তার হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর তার বাগান থেকে ৬ লাখ টাকার মালটা বিক্রি হয়ে থাকে। মালটায় সফল হয়ে তিনি আরও ১ একর জমিতে পেয়ারার চাষ করেছেন। পাশাপাশি আরো দেড় বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ এবং লেবুর বাগান করেছেন। যেখান থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন।
উদ্যোক্তা মাসুদ রানা বলেন, অদম্য পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যেকোনও লক্ষ্য অর্জনে সফলতা আসে। পড়াশোনা শেষ করে কোম্পানির চাকরিতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেও সামান্য বেতন পাওয়ায় প্রতিনিয়ত হতাশায় ভুগতাম। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়েছি। এতে গত কয়েক বছরে আমি বেশ ভালো মুনাফা ঘরে তুলেছি। একাজে কৃষি কর্মকর্তারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সংসারের বোঝা হয়ে না থেকে দেশের সকল বেকার যুবকদের যেকোনও বিষয়ে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় ২.৫ হেক্টর জমিতে মালটার চাষ হয়েছিল। তবে গাছের বয়স হওয়ায় অনেক কৃষক মালটার গাছ কেটে ফেলেছেন। এখনও ১ হেক্টর জমিতে মালটার বাগান রয়েছে। সাধারণত মালটার গাছ লাগানোর পর তার বয়স দুই বছর হলে শতভাগ মালটা সংগ্রহ করা যায়। তাই মালটা চাষে প্রথম বছর একটু খরচ করতে হয়। তারপর আর কোনও খরচ হয়না। তখন শুধু জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করা হয়। মালটা গাছের পরিচর্যার দিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। গাছ যেন রোগাক্রান্ত না হয়।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, মালটা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ফলটি বেশ সুমিষ্ট হওয়ায় বাজারেও এর চাহিদা আছে। আবাদ বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের ব্যাপারে কৃষি বিভাগ সহায়তা দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, মাসুদ রানার মতো সারিয়াকান্দিতে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যারা এখন অর্থনৈতিকভাবে বেশ সফল হয়েছেন। এতে একদিকে যেমন দেশে বেকার যুবকদের সংখ্যা কমছে। অপরদিকে বিদেশ থেকে ফল আমদানিও কম করতে হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছি। কেউ আগ্রহী হলে তাদেরও সহায়তা করা হবে। আগামী দিনে মাল্টার চাষ আরও বাড়বে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল