বাংলাদেশে নারীরা পুরুষদের তুলনায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে বেশি আগ্রহী, এমন এক চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক গবেষণায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইল আর্থিক সেবা ব্যবহারে নারীদের মনোভাব তাদের ব্যবহারিক ইচ্ছাকে পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণভাবে প্রভাবিত করে। এটি সেই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে যে, নারীরা নাকি ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণে ধীর।
ব্রিজিং দ্য জেন্ডার গ্যাপ ইন মোবাইল পেমেন্ট সার্ভিস : ইনসাইটস ফ্রম কনজ্যুমারস অব বাংলাদেশ শিরোনামের এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মো. রাশেদুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. সালাউদ্দিন পলাশ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাহমান মো. মোস্তাফিজুর ও মো. শেখ ফরিদ এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের নুসরাত জাহান সামরিয়াভ। গবেষক দল সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৩০০ সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর ওপর সমীক্ষা চালান, যেখানে নারী ও পুরুষের অংশগ্রহণ ছিল প্রায় সমান। অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মোবাইল পেমেন্ট সেবাকে তারা কতটা উপকারী, সহজ, বিশ্বাসযোগ্য, জীবনধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যে কোনো সময় ব্যবহারের উপযোগী মনে করেন?
নারীরা বেশি আগ্রহী, পুরুষরা বেশি বাস্তববাদী : গবেষণায় দেখা গেছে, উপযোগিতা, ব্যবহার সহজতা, নতুনত্বের প্রতি আগ্রহ এবং সুবিধাজনকতা ব্যবহারকারীদের মনোভাব গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। নারীদের ক্ষেত্রে এই মনোভাব ও ব্যবহারিক ইচ্ছার সম্পর্কটি ছিল বিশেষভাবে দৃঢ় অর্থাৎ ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হলে তারা দ্রুত মোবাইল পেমেন্ট ব্যবহারে আগ্রহী হন। অন্যদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নির্ভর করেছে সেবাটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে কতটা মানানসই এবং কতটা সহজে ব্যবহারযোগ্য তার ওপর। আরও আশ্চর্যের বিষয়, বিশ্বাস ও নিরাপত্তা বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের জন্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি- যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাস্তবতার সঙ্গে ভিন্ন।
সেবা নকশায় দরকার লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি : গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবাগুলোকে নারী-পুরুষের ভিন্ন প্রেরণাকে মাথায় রেখে নকশা করা উচিত। তাদের মতে, নারীদের জন্য আরও সহজবোধ্য ও ব্যবহারবান্ধব অ্যাপ তৈরি করা এবং তাদের আত্মবিশ্বাস ও ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে প্রচারাভিযান চালানো জরুরি। অন্যদিকে পুরুষ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে সেবার নির্ভরযোগ্যতা ও দৈনন্দিন প্রয়োগযোগ্যতার ওপর। গবেষক দলের প্রধান মো. শেখ ফরিদ বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে বদলে দিতে পারে, তবে এই সেবাগুলোতে নারী-পুরুষের পার্থক্যগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।