নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া আশরাফ। বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় সবে যাত্রা শুরু হয়েছে এ শিক্ষার্থীর। মনে দাগ কেটে আছে গত বছরের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্মৃতি। ১২ আগস্ট স্মৃতির মানসপট থেকে সেই দিনের কথা জানান দিতে তিনি হাজির হন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আর্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাব (এনএসইউএপিসি) আয়োজিত ‘কালারস অব রেভল্যুশন ২.০’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায়।
সামিয়া আশরাফ রংতুলিতে ফুটিয়ে তোলেন এক আবেগময় স্মৃতি। তাঁর আঁকা ছবিটিতে উঠে আসে বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো প্রতিবাদী এক লাশের মিছিল। এটা যেনতেন কোনো লাশের ছবি নয়, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো তাজা লাশ। প্রতিবাদী সেই মিছিলের সারিতে অংশ নিয়েছিল নির্ভীক ছাত্র-জনতার ঢল। যখন ঢাকার রাজপথে ছিল কারফিউ। বের হলেই পুলিশের গুলির নিশ্চিত সম্ভাবনা জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবাদীই হয়ে উঠেছিল মুখ্য।
সামিয়া আশরাফের আঁকা এ ছবিটি গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের না জানা অনেক গল্পের একটি। সুনিপুণ হাতের এই শিল্পকর্মটি এনএসইউএপিসির ‘কালারস অব রেভল্যুশন ২.০’ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে। এ প্রতিযোগিতায় অর্ধশতাধিক উদীয়মান শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। যারা সবাই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। গত বছর জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এমন একটি আয়োজন করেছিল এনএসইউএপিসি। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই বলে দেয় জুলাই অভ্যুত্থানকে ঘিরে সৃজনশীল এমন আয়োজনের আবেদন অনস্বীকার্য। এনএসইউএপিসির সভাপতি তৌফিক আরেফিন কৌশিক বলেন, ‘এমন আয়োজন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে আরও ছড়িয়ে দেবে। প্রতিবাদে উজ্জীবিত করবে। সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। আমরা এ ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে চাই।’
এনএসইউএপিসির চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ঘুরে বেশ কয়েকটি ছবিতে চোখ আটকে যায়। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা চিত্রটির ব্যাপারে কিছু না বললেই নয়। এ ছবির ধরন ছিল ব্যঙ্গাত্মক। কিন্তু অসম্ভব প্রতিবাদী। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মুখচ্ছবি। মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করার বিষয়টি ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয় রংতুলির আঁচড়ে। সেই কাজটি বেশ সার্থকতার সঙ্গে করেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া ফারাবি। তৃতীয় স্থান অধিকার করা চিত্রটির কথা নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার কিছু নেই। এটি ছিল ইন্টারনেট জগতে বহুল আলোচিত একটি ছবির অনুলিপি। রিকশায় করে বয়ে নেওয়া শহীদ নাফিসের লাশের এ ছবিটি কে না দেখেছে। ঠিক সেই ছবির মতো করে রংতুলিতে জাকিয়া জেরিন ফুটিয়ে তোলেন তাঁর আঁকা ছবি।
তবে এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শুধু এ তিনটি ছবিই নজর কেড়েছে তাই নয়। উদীয়মান শিল্পীদের আঁকা প্রতিটি ছবিই জুলাই অভ্যুত্থানের কোনো না কোনো স্মৃতিকে আবার নতুন করে আমাদের সামনে হাজির করে। এই প্রতিযোগিতায় আঁকা আরও দুটি ছবিকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রব খান। অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিচারক অধ্যাপক শাহরিয়ার ইকবাল রাজ ও এনএসইউএপিসির উপদেষ্টা এ কে এম সালেহ আহমেদ অনীক উপস্থিত ছিলেন। এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী এ প্রতিযোগিতার প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা শিক্ষা দেয়। এনএসইউ সব সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সঙ্গে সহপাঠ্য কার্যক্রমকে উৎসাহ দিয়ে আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আর্ট অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাব। শিক্ষার্থী, মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম (এমসিজে) প্রোগ্রাম, এনএসইউ।