রমজান মাসে শরীরের বিপাকীয় ম্যাটাবলিক কার্যক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আসে। পরিবর্তন আসে আমাদের জীবনযাত্রায়ও। তাই রোজার সময় সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোজার খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো-
১. সাহরি : দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট কেন দরকার?
♦ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ধীরে হজম হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের স্থিতিশীল মাত্রা বজায় রাখে।
♦ এগুলো ধীরে শক্তি মুক্তি দেয়, যা সারা দিন কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করে।
প্রোটিন ও ফাইবার কেন প্রয়োজন?
♦ প্রোটিন (যেমন- ডিম, দই, মুরগি, ডাল) পেশির গঠন বজায় রাখে ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে।
♦ ফাইবার (যেমন শাকসবজি, ছোলা, ফল) হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
পানি ও ইলেকট্রোলাইট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
♦ পানি ও খনিজ উপাদান (যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত) শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করে।
♦ সাহরিতে পর্যাপ্ত পানি না পান করলে দিনের বেলা মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ও রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
২. ইফতার : দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারে খেজুর কেন উপকারী?
♦ খেজুরে সহজে হজমযোগ্য গ্লুকোজ থাকে, যা দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে শক্তি পুনরুদ্ধার করে।
♦ এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্র ও হজমে সাহায্য করে।
হালকা ও তরল খাবার কেন প্রয়োজন?
♦ দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকার পর হালকা ও সহজপাচ্য খাবার (যেমন ডাবের পানি, লেবু-গুড়ের শরবত, ফল) খেলে হজমতন্ত্র স্বাভাবিকভাবে সক্রিয় হয়।
♦ সরাসরি ভারী বা ভাজাপোড়া খাবার খেলে অ্যাসিডিটি ও বদহজম হতে পারে।
ছোলা ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার কেন ভালো?
♦ ছোলা, দই, ডাল, মাছ বা মুরগি শরীরে প্রোটিন ও প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা পেশি শক্তিশালী রাখে।
♦ ছোলায় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) রয়েছে, যা ধীরে গ্লুকোজ নিঃসরণ করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মিষ্টি কেন ক্ষতিকর?
♦ অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল বাড়ায়।
♦ অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার (যেমন জিলাপি, রসগোল্লা) রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা পরে কমে গিয়ে ক্লান্তির সৃষ্টি করে।
৩. রাতের খাবার : পরিপূর্ণ পুষ্টির ভারসাম্য কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফাইবার কেন দরকার?
♦ লাল চালের ভাত, আটার রুটি, ডাল, শাকসবজি, মাছ বা মাংস খেলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়।
♦ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হজম সহজ করে ও শক্তি ধরে রাখে।
৪. রোজার সময় শরীরের পরিবর্তন (Scientific Impact of Fasting) শরীরের ডিটক্সিফিকেশন :
♦ দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীর নিজেই টক্সিন বের করে দেয় (Autophagy)।
♦ এটি কোষগুলোর পুনর্গঠন ঘটিয়ে বার্ধক্য কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি :
♦ রোজা শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।
স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতি : রোজার সময় ব্রেন-ডেরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) নামে একটি প্রোটিন বাড়ে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
লেখক : সামিয়া তাসনিম, পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড, গুলশান, ঢাকা।