চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে পানি দূষণ হওয়ায় মরে ভেসে উঠছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে নদী উপকূল এলাকায় মরা মাছের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চলতি বছর জানুয়ারি মাসে বিষয়টি তদন্ত করেছে। এবারও মাছ মরে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
শনিবার (১৭ মে) ভোর থেকে মতলব উত্তর উপজেলা ষাটনল থেকে দশানি পর্যন্ত মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেষে থাকার চিত্র দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নদীপাড়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ওইদিন ভোরে স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে নামেন। তখন তারা দেখতে পান পানিতে ভেসে রয়েছে অসংখ্য মরা মাছ।
বিশেষ করে জাটকা, চেউয়া, বেলে, টেংরা, পুটি, চাপিলাসহ অসংখ্য ছোট-বড় দেশীয় মারা যাওয়া মাছ। অপরদিকে পঁচা মাছের দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষরা দূষণ হওয়া নদীর পানি খাওয়া ও ব্যবহার করতে পারছে না। কি কারণে বার বার নদীতে মাছ মারা যাচ্ছে এবং পানি দূষণ হচ্ছে, তার সমাধান চান এলাকাবাসী।
এদিকে, ইলিশের পোনা জাটকা মরে ভেসে উঠায় চিন্তিত মেঘনা পাড়ে জেলেরা। এভাবে ছোট ইলিশ (জাটকা) মারা পড়লে মৌসুমে কাঙ্খিত ইলিশ পাবে কি-না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলেরা।
ষাটনলের জেলে পলাশ দাশ বলেন, এই নদী আমাদের জীবন। কিন্তু এখন নদীতে মাছ তো নেই, বরং বিষ ছড়িয়ে পরেছে। কয়েক বছর ধরেই এমন হচ্ছে। কেউ কোন ব্যবস্থা নেয় না। জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এভাবে মরতে থাকলে, মেঘনা নদী মাছ শূন্য হয়ে পড়বে।
দশানির জোসনা বেগম বলেন, বাচ্চারা নদীতে খেলতে যায়, গোসল করে। এখন তো মনে হচ্ছে পানিতে হাত দিলেও অসুস্থ হয়ে যাবে। আমরা নদীর পানি সব সময় ব্যবহার করি কিন্তু এখন তা করতে পারছি না। মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, আজকে যা দেখলাম, তাতে আগামী কয়েক মাস নদী থেকে মাছ পাওয়া কঠিন হবে। বাজারে মাছের দাম বেড়ে যাবে এবং লোকজন ভুক্তভোগী হবে।
নদীর এই অবস্থা অত্যন্ত দুঃখ ও উদ্বেগজনক। মাছ মরার এই ঘটনা শুধু পরিবেশের ক্ষতি নয়, মানুষের জীবিকার উপরও সরাসরি আঘাত। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই নদীর উপর নির্ভরশীল। আমি উপজেলা পরিষদে বিষয়টি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাবো। নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো, এটাই এখন সবার মূল দাবি হওয়া উচিত।
মতলব উত্তর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, এটি নিছক মাছ মরার ঘটনা নয়, এটি একটি জলজ পরিবেশগত দুর্যোগ। শীতলক্ষ্যা থেকে আসা দূষিত পানির প্রবাহ একাধিকবার এই এলাকায় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এটি প্রথম নয়, এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। ২০২৩ সালের মার্চ ও ২০২৪ সালের আগস্ট মাসেও একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। তখনও মেঘনার পানি দূষিত হয়ে মাছের গণমৃত্যু হয়েছে। তবে এবার পরিমাণ আরও বেশি দেখা যাচ্ছে।
পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক শামীম খান বলেন, নদীকে কেন্দ্র করে হাজারও পরিবার মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দ্রুত আন্তঃজেলা পরিবেশ কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। মানবিক ও পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী। নদীর ওপর নির্ভরশীল হাজারো মানুষের জীবিকা এখন হুমকির মুখে।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মিজানুর রহমান বলেন, মেঘনা নদীতে মাছ মরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানকার প্রতিবেদন অনুযায়ী নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে গিয়েছিল। নতুন করে আবার কেন মাছ মারা যাচ্ছে, সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে। তবে আবারও মাছ মারা যাওয়ার খবর কেউ জানায়নি। ঘটনাস্থলে গেলে পুরো বিষয়টি জানতে পারবো।
বিডি প্রতিদিন/এএ