চোখ মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। চোখ আছে বলেই আমরা সবকিছু সুন্দরভাবে দেখতে পাই। অনেকেই চোখের যত্ন নিয়ে অবহেলা করে থাকি। দেখা যায় শরীরের অন্যান্য রোগ-বালাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা যতটা যত্নবান চোখের ক্ষেত্রে আবার ঠিক উল্টো। অথচ চোখের যত্ন ও চিকিৎসায় আরও বেশি যত্নবান হওয়া জরুরি। এই চোখের ভিতরে রয়েছে বিশেষ জলীয় অংশ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর একটি অংশের নাম অ্যাকুয়াস। এটির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে চোখের চাপ বা প্রেশার। অ্যাকুয়াস চোখের ভিতরে সিলিয়ারি বডি নামক অংশে প্রস্তুত হয়ে সামনের দিকে প্রবাহিত হয় এবং চোখের কোণে অবস্থিত অ্যাঙ্গেল অব স্কেম নামক অংশ দিয়ে চোখের বাইরের অংশে এসে রক্তে মিশে যায়। কোনো কারণে অ্যাকুয়াস বেশি বা কম পরিমাণ অ্যাঙ্গেল দিয়ে নিঃসৃত হলে চোখের প্রেশার বেড়ে যায়। একে বলা যায় চোখের উচ্চচাপ। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে অপটিক নার্ভ বা চোখের নার্ভ নষ্ট হয়ে যায়। একবার কোনো নার্ভ নষ্ট হলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন।
গ্লুকোমার ধরন : পারিবারিক প্রভাব এ রোগের ক্ষেত্রে বেশ প্রভাব ফেলে। চোখের অন্যান্য জন্মগত ত্রুটির কারণেও গ্লুকোমা হতে পারে। আবার চোখের কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে। তবে আপাত দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়া বয়স্কদের গ্লুকোমা বা প্রাইমারি গ্লুকোমা বোঝায়। প্রাইমারি গ্লুকোমা দুই ধরনের- প্রাইমারি ন্যারো অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ও প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা। এর মধ্যে প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ভয়ংকর।
এর কোনো ধরনের উপসর্গ নেই। বলা যায়, চোখের নীরব ঘাতক।
শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা : এ রোগে যদি কোনো উপসর্গ না দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ছাড়া রোগ নির্ণয় করা কঠিন। গ্লুকোমা শনাক্তকরণে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব নিতে হয়- চোখের প্রেশার বা আইওপি ২১-এর ওপর থাকলে টনোমিটার নামক যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়। অপটিক নার্ভ হেড ইভ্যালুয়েশন ও অফথ্যালমোস্কোপ দিয়ে চোখের ভিতরের অংশ দেখে বোঝা যায়। এটি তাৎক্ষণিকভাবে করা যায়। ভিজ্যুয়াল ফিল্ড অ্যানালাইসিস বা চোখের নার্ভের অবস্থান নিরূপণ করা, যা একটি ডিজিটাল যন্ত্রের সাহায্যে করতে হয়।
গ্লুকোমার চিকিৎসা : চোখের ড্রপের সাহায্যে চিকিৎসা দেওয়া যায়। তবে এটি সারাজীবন চালিয়ে যেতে হয়। এর দুটি প্রতিবন্ধকতা হলো- সারা জীবনের জন্য ব্যয়নির্বাহ ও ওষুধ দিতে ভুলে যাওয়া। এ ছাড়া অপারেশনের মতো স্থায়ী পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসাও রয়েছে। এতে সুবিধা হলো- চোখের প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধের চেয়ে এ পদ্ধতি বেশি কার্যকর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লেজারের সাহায্যেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গ্লুকোমার অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেতে আগে রোগটি শনাক্ত করা জরুরি। তারপর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা এবং চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত। যারা মনে করেন, সারা জীবন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন অথবা নিয়মিত ওষুধ দিতে ভুলে যাবেন কিংবা যাদের চোখের প্রেশার ড্রপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তাদের অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়াই ভালো। তবে গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা জরুরি। কোনো অবস্থায়ই নিজে নিজে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উত্তম। কারণ, রোগীর শারীরিক অন্যান্য সমস্যা ও জটিলতাও এ সময় পর্যবেক্ষণ করতে হয়। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অপারেশন করা ঠিক নয়। সুতরাং এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।
হতে হবে আরও বেশি যত্নবান ও সচেতন।
লেখক : অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির পরিচালক ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, গ্লুকোমা বিভাগ বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ, ঢাকা