গত বছরের রমজানে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে রাজধানীতে সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল মৎস্য অধিদপ্তর। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করেছিল সরকারি এ সংস্থা। যেখানে তৎকালীন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফকে চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রামের সাবেক প্রকল্প পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামানকে সদস্যসচিব করেন তৎকালীন মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর। কিন্তু সে উদ্যোগের আড়ালেই ঘটেছে বড় ধরনের অনিয়ম, এমনটাই অভিযোগ করেছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষিরা। তাঁদের দাবি, মৎস্য অধিদপ্তরের সৈয়দ মো. আলমগীর, আবদুর রউফ এবং এস এম মনিরুজ্জামান মিলে প্রকল্পের মাছ ও টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মজুত থেকে ৯০০ কেজি মাছের কোনো হিসাব পাননি মাছ চাষিরা। অভিযুক্ত এস এম মনিরুজ্জামান বর্তমানে অধিদপ্তরের চিংড়ি শাখার উপপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
মাছ চাষিদের সংগঠন ফিশ ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ফোয়াব) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের রমজানে সুলভ মূল্যে বাজারে সরবরাহের জন্য তারা মৎস্য অধিদপ্তরকে রুই, পাঙাশ, তেলাপিয়া ও পাবদা মিলিয়ে কয়েক হাজার কেজি মাছ দেন। যেগুলো রমজানে রাজধানীর ৩০ জায়গায় ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী রমজানেই চাষিদের সব টাকা পরিশোধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেড় বছর পেরিয়ে গেছে, এখনো ১৯ লাখ ১৪ হাজার ৬০৮ টাকা বকেয়া। ৯০০ কেজি মাছের হিসাব তারা পাননি।
সম্প্রতি মৎস্য উপদেষ্টাবরাবর দেওয়া ফোয়াবের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মাছ সংগ্রহ ও বিক্রির দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তা নানান অজুহাতে টাকা পরিশোধ না করে বিষয়টি দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলিয়ে রেখেছেন। একই সঙ্গে অভিযোগ রয়েছে, উপপরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান তাঁর এক বন্ধুর সহযোগিতায় ৯০০ কেজি মাছ নিজেরাই সরিয়ে নিয়েছেন। সে মাছের হিসাব প্রকল্প নথিতে নেই।
ফোয়াব সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান সাহীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমরা পুরো কাজটা করেছিলাম। রমজান শেষে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও দেড় বছরেও অ আমাদের বকেয়া টাকা পাইনি। এতে আমরা ও প্রান্তিক চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের তারা কোনো ওয়ার্ক অর্ডারও দেয়নি। আমরা মৎস্য উপদেষ্টাবরাবর অভিযোগ দিয়েছি। বর্তমান সদস্যসচিব আমাদের সাত দিনের মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন বলে কথা দিলেও সে কথা রাখেননি।’
অভিযোগের বিষয়ে অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আবদুর রউফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক যে হিসাব সেটা তৎকালীন ডিজি দেখভাল করেছেন। উনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। আমি শুধু চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলাম। সরবরাহের বিষয়টি দেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো নির্দেশ দেয়নি তাই আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তারা তো অভিযোগ সেখানেই করেছে। নির্দেশনা দিলেই আমরা সেভাবে ব্যবস্থা নেব।’