ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পরিবেশসহ সার্বিক বিষয়ে জেনেছে কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদল। নির্বাচনি পরিবেশের পাশাপাশি বিশেষ করে ভোট কেন্দ্রের ভিতরে ও বাইরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে জোর দিয়েছেন তারা। এদিকে সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ তা প্রকাশ করা হতে পারে। গতকাল ইসির সঙ্গে কমনওয়েলথের প্রাক্-নির্বাচনি
পর্যবেক্ষক দলের বৈঠক শেষে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এসব তথ্য জানান।
গতকাল কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশনের উপদেষ্টা ও প্রাক্-নির্বাচন অ্যাসেসমেন্ট প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, ভোটকে সামনে রেখে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের বিষয় জানানো হয়েছে। উনাদের ডেলিগেশন প্রি-ইলেকশন পিরিয়ড, ইলেকশন ডে ও পোস্ট ইলেকশন পিরিয়ডেও আসতে চাইবেন। পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, কীভাবে করা হবে। কোথাও ডিসপিউট হলে কীভাবে হ্যান্ডেল করি তাও জানতে চেয়েছেন। আরপিও অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা বিধি, আচরণবিধি ও ইসির নেতৃত্বে পাঁচটি কমিটি এবং আদালতের নির্দেশনা মেনে সব ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয় বলে জানানো হয়েছে প্রতিনিধিদলকে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কীভাবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং কী কী কাজ করা হয়েছে তার অগ্রগতিও তুলে ধরা হয়েছে।
সচিব বলেন, রিফর্মস কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আরপিও থেকে শুরু করে কনডাক্ট রুল, বিভিন্ন আইন-বিধি সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আরপিও সংশোধনও করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিনিধিদলের কাছে জানানো হয়েছে। সিকিউরিটি মেজারসগুলো জানতে চেয়েছেন। কোন স্তরে কীভাবে করব আমরা। আমরা বলেছি- আমাদের সঙ্গে যারা নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আলোচনার ভিতরে আছি, এটা পর্যায়ক্রমিকভাবে করা হবে। আইনশৃঙ্খলার দুটো বিষয়ে প্রতিনিধিদল জোর দিয়েছে বলে জানান তিনি।
সচিব বলেন, দুটো বিষয়ে উনারা আলোকপাত করেছেন। একটা ভোট কেন্দ্রে, আরেকটা পরিবেশগত। ভোট কেন্দ্রের বিষয়ে বলেছি- কেন্দ্রের সিকিউরিটি মেজারস হচ্ছে আমাদের ১৪ থেকে ১৮ জনের টিম কাজ করে; বাইরে সিকিউরিটি ওভার অল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ, এটা পুলিশের এখতিয়ারাধীন। উই আর ইনক্লোজ কনটাক্ট উইথ এভ্রিবডি। লোকবলের প্রশিক্ষণ, এআই অপব্যবহার রোধ, মিথ্যা তথ্যসহ সার্বিক বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে সহায়তার সুযোগ থাকলে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
ভোট কেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ভোট কেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়েছে এবং সোমবার তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ব্যাপারে অগ্রগতি মাঠপর্যায় থেকে আসা বাড়তি তথ্য পর্যালোচনা চলছে। এই সপ্তাহের ভিতরে এটি চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপির চিঠির বিষয়ে সচিব বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল আরপিওর নির্বাচনি প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়ে গেছে। কমিশন পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগোচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তো সবকিছু যে ১০০ শতাংশ করা সম্ভব নয়, এটা আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু জায়গায় অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হয়। কিছু কিছু বিষয় আমরা আগেই কমপ্লিট করেছি, কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সর্বদলীয় সমর্থন চাইছে কমনওয়েলথ
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে কমনওয়েলথ নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশনের উপস্থিতি নিয়ে সব অংশগ্রহণকারীর সমর্থন নিশ্চিত করতে চাইছে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যেই কমনওয়েলথের প্রাক্-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন কমনওয়েলথ নির্বাচন সহায়তা বিভাগের প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজ। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি এ তথ্য জানান। অ্যান্ড্রুজ বলেন, কমনওয়েলথ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রথা অনুযায়ী, মহাসচিবের পক্ষ থেকে এই মিশন পাঠানো হয়েছে। কমনওয়েলথের নির্বাচন সহায়তা বিভাগের প্রধান লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির ড. দিনুষা পন্ডিতরত্ন, ন্যান্সি কানিয়াগো, সার্থক রায় এবং ম্যাডোনা লিঞ্চ।
লিনফোর্ড অ্যান্ড্রুজ জানান, প্রধান উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশের নির্বাচনে কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক মিশনের উপস্থিতির বিষয়ে সব অংশগ্রহণকারীর মধ্যে সমর্থন আছে কি না তা যাচাই করা। এ ছাড়া তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি মূল্যায়নও করছেন।
তিনি জানান, মিশন ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে এবং এই সময়ে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক দাতা ও কূটনৈতিক সম্প্রদায়, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, কমনওয়েলথ সব সময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকেছে এবং আসন্ন এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে তারা সেই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।
তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময় বলি, কমনওয়েলথের সব সদস্য রাষ্ট্রে গণতন্ত্র একটি চলমান যাত্রা। নির্বাচনের পরও কমনওয়েলথ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারি বজায় রেখে আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি নির্বাচনোত্তর পর্বের (পোস্ট-ইলেকশন ফেইজ) দিকেও দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলেন এবং জানান, পরবর্তী শাসনচক্রে কীভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়া যায়, সেদিকে তারা গভীরভাবে নজর রাখবেন।