নির্বাচনি জোট করলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকেই ভোটে অংশ নিতে হবে-এমন বিধানে নাখোশ বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা। তারা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করতে চান। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশ্লিষ্ট ধারা আগের মতো রাখার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে দলটি। জোটবদ্ধ দলগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছামতো জোটের প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ চায় বিএনপি। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ধানের শীষ অনেক বড় মার্কা। অনেক শক্তিশালী। [প্রথম পৃষ্ঠার পর] ছোট ছোট দলগুলো চায়, জোটের প্রধান দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করতে, সে সুযোগ দেওয়া। ছোট দলের পক্ষে ভোটার আনা কঠিন হয়ে পড়বে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো দল যদি মনে করে তারা জোটসঙ্গীদের প্রতীক নিয়ে ভোট করবে তাহলে সে সুযোগ রাখা উচিত ছিল। কে কোন প্রতীকে ভোট করবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকার কেন এটা করল, বুঝতে পারছি না। জনপ্রিয় একটি প্রতীক ব্যবহার করতে পারলে জোটের প্রার্থীরা নির্বাচনে অনেক সুবিধা পায়।’ তিনি বলেন, ‘সেই সুযোগটাই বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কোনো বাস্তব উন্নতি তো হবে না। আমি কোনো ইতিবাচক ফলাফলও দেখি না।’ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছোট দলগুলো নিজেদের প্রতীকে নির্বাচনে গেলে বড় দলের নেতান্ডকর্মীরা সহায়তা করেন না। আরপিওর এই সংশোধন কার্যকর হলে জোট গঠনেরই কোনো মানে থাকবে না।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, নির্বাচনে প্রধান দলের প্রতীক না থাকলে বিএনপির নেতান্ডকর্মীরা জোটের প্রার্থীদের প্রতি আগ্রহী হবেন না। তিনি বলেন, ধানের শীষ প্রতীকটি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচার হবে। কিন্তু আমার এলাকায় আমি যদি নিজের দলের প্রতীক আনারস নিয়ে নির্বাচন করি, তাহলে আর কতটা লাভ হবে? এখানে জটিলতা আছে। ইসিতে আপত্তি জানাল বিএনপি : নির্বাচনি জোট করলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকেই ভোটে অংশ নিতে হবে এমন বিধানের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। তারা জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশ্লিষ্ট ধারা আগের মতো রাখার দাবি জানিয়েছে।
গতকাল সকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়। বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাইল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন হয় গত বৃহস্পতিবার। এটি এখন রাষ্ট্রপতির সইয়ের অপেক্ষায়। আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, জোট করলেও ভোট করতে হবে দলীয় প্রতীকে। ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, বিএনপি এই সংশোধনের সঙ্গে একমত নয়। এ সংশোধনী বা পরিবর্তন বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এ সংশোধনী থেকে সরে এসে আরপিওর আগের বিধান বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়ে আমরা সিইসির কাছে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছি।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন দল নিজেদের বিবেচনায় জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে, নিজেদের দলের বা জোটভুক্ত অন্য কোনো দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করেছে বলে উল্লেখ করেন ইসমাইল জবিউল্লাহ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা গণতান্ত্রিক অধিকার। অতীতে এ নিয়ে কোনো জটিলতা, সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। কোনো দলের পক্ষ থেকে এ বিধান সংশোধনের দাবি এসেছে বলেও তাদের জানা নেই। ইসমাইল জবিউল্লাহ উল্লেখ করেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিমত চাওয়া হয়। বিএনপি আরপিওর বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সংশোধন প্রস্তাবে মতপ্রকাশ করতে গিয়ে বলে, আরপিওর ২০ নম্বর অনুচ্ছেদ, অর্থাৎ দল বা জোটের প্রতীক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিবর্তনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত পোষণ করে না। বিষয়টি যথাসময়ে নির্বাচন কমিশন, ঐকমত্য কমিশন ও সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসমাইল জবিউল্লাহ আরও বলেন, এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের উচ্চপর্যায়ে, উপদেষ্টা পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের আলোচনাকালে আরপিওর ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল।