ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর আইসিটিবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে দেশটিতে পাঠানো হচ্ছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের আবেদনের পর ৯ সেপ্টেম্বর আদালত যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের বিভিন্ন সম্পদ, বাড়ি, গাড়ি এবং ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা কার্যকর করতেই এমএলএআর পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম। দুদকের নথি অনুযায়ী, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে দুটি বাড়ি রয়েছে। এর একটি ভার্জিনিয়ার গ্রেট ফলস এলাকায়, ২০২৪ সালের ৩ জুন এ বাড়ির মূল্য নির্ধারিত হয় ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৬০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। অপর বাড়িটি ভার্জিনিয়ার ফলস চার্চ এলাকায় অবস্থিত, ২০১৪ সালের ৫ মে বাড়িটির মূল্য ধরা হয় ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বাড়ি দুটির মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৬১ হাজার টাকা।
তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক আবেদনে বলেছে, জয়ের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৮টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস-ক্লাস (২০১৫), ম্যাকলারেন ৭২০ এস (২০১৮), ল্যান্ড রোভার (২০১৬), লেক্সাস জিএক্স ৪৬০ (২০১৫) নিবন্ধিত সাবেক স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওয়াজেদের নামে। এ গাড়িগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯২৪ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি টাকা। আদালত এরই মধ্যে এ গাড়িগুলো জব্দের অনুমোদন দিয়েছেন। দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জয়ের নামে অন্তত ১২টি ব্যাংক হিসাব ও ৬টি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে গোল্ডেন বেঙ্গল প্রোডাকশন্স এলএলসি, প্রাইম হোল্ডিং এলএলসি, ওয়াজেদ ইন অসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি, ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসি, ট্রুপে টেকনোলজিস এলএলসি। ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে ৭টি এসব কোম্পানির নামে, ৫টি সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত, যার মধ্যে একটি যৌথ হিসাবে খোলা হয়েছে তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে। গত ১৪ আগস্ট সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলায় বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তিনি ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয়করের বাইরে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন এবং হুন্ডি ও অন্যান্য অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেন। দুদক জানিয়েছে, জয়ের বিরুদ্ধে আয়কর রিটার্নে বিদেশি আয় গোপন, অননুমোদিতভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সন্দেহজনক লেনদেন পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে প্রমাণ দাখিলের জন্য এসব সম্পদ আলামত হিসেবে পেশ করা হবে। দুদকের এ পদক্ষেপ আসে এমন একসময়, যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন ঘটেছে।
গত ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানাও। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।