বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গুম ও খুনের জন্য শেখ হাসিনার বিচার এ দেশের মাটিতে হতেই হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে। আজ প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনা এই বর্বর হত্যাকাণ্ড ও গুমের জন্য সরাসরি দায়ী। গতকাল বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে ভুক্তভোগী পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে এবং সমন্বয়ক মঞ্জুর হোসেনের পরিচালনায় মানববন্ধনে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে গুম ও হত্যাকাণ্ডের শিকার শতাধিক পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করে আনার চেষ্টা করবে বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত, তাদের বিচার করা হবে। আর এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই, যত দিন পর্যন্ত আমরা তাদের শাস্তি দিতে না পারব, তত দিন আমরা ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে আছি।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির ১ হাজার ৭০০ নেতা-কর্মীকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বর্তমান সরকার এসব ঘটনার বিচার করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’ গুম-খুনের শিকার স্বজনদের কষ্টের কথা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে- আন্দোলনে নামা অনেকেই গুম হয়ে গেল। এক পরিবারের সাতজন পর্যন্তও গুম হয়েছেন। স্বজনহারা ছোট বাচ্চাদের দেখলে কষ্ট হয়, কারণ তাদের একসময় আরও ছোট অবস্থায় দেখেছিলাম।’ মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুম কমিশনকে প্রকাশ্যে আনা ও পাবলিক শুনানি আয়োজনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের মা, ভাইবোনদের কান্না থামাতে তারা ব্যর্থ। এ বিষয়ে অবশ্যই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের প্রতিটি নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে আছি। আমাদের নেতারা বছরের পর বছর মিথ্যা মামলায় কারাগারে থেকেছেন। তারেক রহমানকে বাধ্য করা হয়েছিল নির্বাসনে যেতে। নেতৃত্বের পর্যায়ে এমন কেউ নেই, যার নামে শত শত মামলা নেই বা হয়রানির শিকার হয়নি। তাই এটা ভাবা ভুল হবে যে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব এড়িয়ে যাবে। বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে এসব বিচার শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায়।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের অন্যতম দাবি ছিল গুম ও হত্যার বিচার। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, গুম হওয়া পরিবারের শিশুদের পাশে সব সময় থাকব এবং যত দিন পর্যন্ত ন্যায়বিচার না হবে, তত দিন লড়াই চালিয়ে যাব। গুমের শিকার প্রত্যেকের সম্পূর্ণ তথ্য সরকারকে প্রকাশ করতে হবে।’ গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা নিরাশ হবেন না। জনগণের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয় না। এর নজির নেই। আপনারা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি, যারা পিতা, ভাই বা সন্তান হারিয়েছেন, তারা অবশ্যই ন্যায়বিচার দেখে যেতে পারবেন।’