তিন দিনের সরকারি সফরে আজ ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সফরকালে প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে অন্তত ছয়টি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ইসহাক দার। এ ছাড়া আলোচনার টেবিলে থাকবে পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত তিন ইস্যু। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তিন দিনের সফরে আজ দুপুরে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম ও পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম। পরে সন্ধ্যায় ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন আয়োজিত এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন ইসহাক দার। সেখানে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন রবিবার সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে প্রথমে একান্তে এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বৈঠকে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সংযুক্তি, কৃষি, নানা পর্যায়ে দুই দেশের লোকজনের চলাচল সুগম করাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় আলোচনায় থাকবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দেবে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের সম্পর্ক যেখানে এসেছে, তা এগিয়ে নিতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা জরুরি। দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক অমীমাংসিত তিন ঐতিহাসিক ইস্যুকে বাদ দিয়ে হবে না। অমীমাংসিত বিষয়গুলো হলো- একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন ও অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্সা প্রদান।
এদিকে দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে অন্তত ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হতে পারে। সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির তালিকায় রয়েছে- দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি; বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন; সংস্কৃতি বিনিময়; দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা; রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) মধ্যে সহযোগিতা। তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে রবিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ইসহাক দার। এ ছাড়াও রবিবার সকালে একটি প্রাতঃরাশ বৈঠক করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী। কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, সফরকালে ইসহাক বিভিন্ন রাজনৈতক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় দেখা করতে যাবেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে ইসহাক দারের।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এপ্রিলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক বসেছিল। এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের ১৫ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটে। ওই বৈঠকের ৯ দিন পর পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাতের জেরে সফরটি শেষ মুহূর্তে স্থগিত করে ইসলামাবাদ। তবে আজ তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ইসহাক দার।