বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থায় বিশ্বাস নেই বলে জানিয়েছে জাতীয় গণফ্রন্ট। দলটির বক্তব্য- আগে গণপরিষদ নির্বাচন। তারপর নতুন সংবিধান রচিত হবে। সেই সংবিধানের আলোকে হবে পরবর্তী নির্বাচন। অন্যদিকে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ রাখার সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ। তাদের বক্তব্য- বহুত্ববাদ শব্দটি আল্লাহর একাত্মবাদের বিপরীত শব্দ। এটি বাদ দিয়ে বহু মত বা বহু পথ রাখা যেতে পারে। সংগঠনটি বাংলাদেশকে চার প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে। জাতীয় সংসদের এলডি হলে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) সঙ্গে সংলাপ শেষে দল দুটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এসব কথা জানানো হয়। সকাল ১০টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এনসিসির সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক কমরেড টিপু বিশ্বাসের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নেন লিটু বিশ্বাস, দেবাশীষ পোদ্দার বাপি, কামরুজ্জামান ফিরোজ, কে এম দেলোয়ার হোসেন এবং তৈমুর খান অপু। দেবাশীষ পোদ্দার জানিয়েছেন, তারা এনসিসির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ১২৯টিতে একমত, ৩০টিতে আংশিক একমত হয়েছেন। বাকিগুলোতে নিজেদের মন্তব্য দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আমরা বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থা বিশ্বাস করি না। আগে গণপরিষদ নির্বাচন হবে। তারপর নতুন সংবিধান রচিত হবে। সেই সংবিধানের আলোকে পরবর্তী নির্বাচন হবে। টিপু বিশ্বাস জানান, ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশের সংবিধান রচনার জন্য সংবিধান সভার প্রয়োজন ছিল। তা না করে ইচ্ছামতো সংবিধান রচনা করা হয়েছে। গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এ সংবিধানের অধীনে যারা দেশ শাসন করেছে, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। গণতন্ত্র ধ্বংস করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়েছে। সংবিধানে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এনসিসির সঙ্গে অপর বৈঠকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমদ ও যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী। সংগঠনটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪৭টিতে একমত, ১৫টিতে দ্বিমত এবং চারটিতে আংশিকভাবে একমত বলে লিখিত মতামতে জানিয়েছে।
সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাবের বিষয়ে কমিশন ব্যাখ্যা করেছে বলে জানিয়েছেন মাওলানা ইউসুফ আশরাফ। তিনি বলেন, উনারা বলেছেন, তারা বুঝাতে চেয়েছেন বহুত্ববাদ বলতে বহু সংস্কৃতি, বহু মত ও পথের লোক যেহেতু বাংলাদেশে বাস করেন, সবার বিষয়টি যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। আমরা বলেছি ‘বহুত্ববাদ একত্ববাদের বিপরীত শব্দ। এটি বাদ দেন। বহু সংস্কৃতি, বহু মত, বহু পথের সঙ্গে আমরাও একমত। আমরাও চাই এটি আসুক। এজন্য অন্য শব্দ যেন এখানে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন হলে বহু মত, বহু পথ এই শব্দটাও ব্যবহার করতে পারেন।’
জালাল উদ্দিন আহমদ বলেন, বহুত্ববাদ একত্ববাদের বিপরীত শব্দ বা প্রতিশব্দ। এর মাধ্যমে আল্লাহ যে এক এটির বিরোধিতা বোঝা যায়। তাই এটি বাদ দেওয়ার জন্য জোর প্রস্তাব করেছি। সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখার বিধান পুনর্বহালের দাবি করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ। চারটি প্রদেশে ভাগ করলে রাষ্ট্রের খরচ বাড়বে। তাই এ ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছি। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রস্তাব করেছিল কমিশন। বিষয়টিতে দ্বিমত করেছে সংগঠনটি। জালাল উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ইউপি সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না। হবে টাকার ছড়াছড়ি। ইউপিতে জনগণের সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। উপজেলা পরিষদেও তা-ই।