জুলাই আন্দোলন দমাতে সারা দেশে ৩ লাখ ৫ হাজার ৩১১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় ছোড়া হয় ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড বুলেট। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গতকাল এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আসামিপক্ষের শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকালের বিচারিক কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আসামি। গতকাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর ছাড়াও উপস্থিতি ছিলেন মিনহাজুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম, বি এম সুলতান মাহমুদ প্রমুখ। এদিন কাঠগড়ায় নিশ্চুপ ছিলেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা ৫ অভিযোগ সঠিক নয়। নির্দোষ প্রমাণ করে নজির গড়তে চান তিনি।
এদিন তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। শুনানিতে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলন দমনে সারা দেশে ৩ লাখ ৫ হাজার ৩১১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় ছোড়া হয় ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড তাজা বুলেট। শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের নির্দেশে সারা দেশে পদ্ধতিগতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় বলেও জানান তাজুল ইসলাম।
পরে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর বক্তব্য জানতে চান। এ সময় শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক মামলা। তিনি এ মামলার নথিপত্র ২৫ জুন পেয়েছেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাননি, তা ছাড়া তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাই তার প্রস্তুতির জন্য ১৫ দিন সময় প্রয়োজন। আদালত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বক্তব্য জানতে চাইলে মামলার এ পর্যায়ে কোনো বক্তব্য না দেওয়ার কথা ট্রাইব্যুনালকে জানান অ্যাডভোকেট জায়েদ বিন আমজাদ। পরে ট্রাইব্যুনাল ছয় দিন সময় মঞ্জুর করে আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। সেদিন আসামিপক্ষ যুক্তি তুলে ধরবে। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আইনজীবী আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে খালাস করার জন্য তার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন বলেন, তিনি মনে করেন, তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে যে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সঠিক নয়। অভিযোগগুলো সঠিক না বিধায় তিনি ট্রাইব্যুনালে ডিসচার্জের (অব্যাহতির) আবেদন করবেন।
মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে যে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যার দায়; চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যার দায় এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়। এ ধরনের বড় মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর কাউকে মুক্ত করার নজির আছে কি না, তা আমির হোসেনের কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, নজির নেই। কিন্তু নজির তো যে কোনো সময় হতে পারে।
শেখ হাসিনা-জয়সহ ২৩ জনকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি : প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির পাঁচ মামলায় গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ২৩ জনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০ জুলাই পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। অন্য যাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন রয়েছেন।