‘ও সাত ভাই চম্পা জাগো রে,
কেন, কেন বোন পারুল ডাকরে...’
রূপকথার গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘সাত ভাই চম্পা’ ছবিতে পারুলরূপী কবরী চম্পা ফুল হয়ে যাওয়া তার সাত ভাইকে ফিরে পেতে এ গানের মাধ্যমে আকুতি প্রকাশ করেন। ১৯৬৮ সালে মুক্তি পায় দিলীপ সোম পরিচালিত সর্বকালের সেরা বাংলা চলচ্চিত্র সাত ভাই চম্পা। মূলত সাত ভাই চম্পা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় রূপকথার গল্প। গল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯০৭ সালে দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ নামক রূপকথার বইয়ে। সাহিত্যে নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছিলেন। ১৯৪৪ সালে বিষ্ণু দে কর্তৃক গল্পটি পুনরায় বিস্তারিতভাবে ‘সাত ভাই চম্পা’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৬৮ সালে এ দেশে মুক্তিপ্রাপ্ত সাত ভাই চম্পা চলচ্চিত্রটিকে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট সর্বকালের সেরা ১০টি বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে স্থান দিয়েছে। ছবিটি নির্মাণের নেপথ্যে ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান। জানা যায়, এ দেশের রূপকথার গল্পে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় ১৯৬৫ সালে। ছবিটির নাম ছিল ‘রূপবান’। এটি তখন দর্শকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। আর এ কারণেই খান আতা সিদ্ধান্ত নেন পাঠক সমাদৃত আরেক রূপকথার গল্প ‘সাত ভাই চম্পা’ অবলম্বনে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। কিন্তু তিনি এ দেশে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে চাননি। তার আশঙ্কা ছিল তিনি এ চলচ্চিত্রটির নির্মাণকাজ এ দেশে করলে অন্য যে কেউ রূপকথার গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করতে পারেন এবং সাত ভাই চম্পার আগেই যদি এমন গল্পের অন্য একটি ছবি মুক্তি পেয়ে যায় তাহলে খান আতার ছবিটি হয়তো বড় মাপের সাফল্য নাও পেতে পারে। তাই খান আতা ছবিটির নির্মাণের বিষয়টি গোপন রাখতে পশ্চিম পাকিস্তানে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সেই হিসেবে ওই দেশের বারী স্টুডিওতে অতি গোপনে ছবিটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৮ সালের ২৯ মার্চ ছবিটি মুক্তি পায়। মুক্তির পর পরই ছবিটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। ছবিটি দেখতে সিনেমা হলে দর্শকের অভাবনীয় ঢল নামে। সপরিবারে বারবার ছবিটি দেখেও যেন তাদের দেখার ক্ষুধা মিটছিল না। এ ছবির প্রতিটি গানই মানুষের মুখে মুখে ফিরত। আজও সমান জনপ্রিয় হয়ে আছে সাত ভাই চম্পা ছবিটি এবং এর শ্রুতিমধুর গানগুলো। খান আতা এ ছবির নেপথ্য কারিগর হলেও চলচ্চিত্রটির পরিচালক হিসেবে তিনি নাম ব্যবহার করেন তাঁর প্রধান সহকারী দিলীপ সোমের। চলচ্চিত্রটিকে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট সর্বকালের সেরা ১০টি বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্যে স্থান দেয়। চট্টগ্রামের খুরশিদ মহল সিনেমা হলে ছবিটি একটানা তিন মাস প্রদর্শিত হয়ে রেকর্ড গড়েছিল। ছবিটির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখেন খান আতাউর রহমান। প্রযোজনা করেন মিজানুর রহমান বুলেট। সংগীত পরিচালনা করেন আমির আলী। ‘সাত ভাইয়ের এক বোন পারুলের ভূমিকায় কবরী ছিলেন অনবদ্য। তাঁর সৌন্দর্য এবং সুঅভিনয় ছবিটিতে প্রাণসঞ্চার করে। বিশেষ করে ‘শোনেন শোনেন জাঁহাপনা’ গানের দৃশ্যে কবরীর অভিব্যক্তি ছিল অসাধারণ। আজিমও সওদাগরের ভূমিকায় রোমান্টিক আবেদন সৃষ্টি করেন।