ক্ষতিকর ও অপবিত্র কিছু খাওয়ার অনুমতি ইসলাম কখনো দেয় না। ধূমপান, তামাক, জর্দা, গুল ইত্যাদি অপবিত্র ও ক্ষতিকর জিনিস বিভিন্ন কারণে নিষিদ্ধ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের গবেষণামতে, তামাকজাতীয় দ্রব্য মারাত্মকভাবে শারীরিক বিপর্যয় টেনে আনে। এর কারণে মাথার চুল পড়া, চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়া, যৌনশক্তি নাশ হওয়া, গর্ভপাত, মৃত শিশু জন্ম, অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পচনশীল রোগ এবং মুখ, গলা, ফুসফুস ক্যানারের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারজনিত রোগে মারা যায়। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ কোরো না (সুরা আল বাকারা-১৯৫)।’ মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘ইসলাম ক্ষতি করা ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমর্থন দেয় না (আহমদ)।’
পানের সঙ্গে জর্দা অথবা তামাকপাতা খাওয়াও ডাক্তারি গবেষণায় শারীরিক ক্ষতিকর। তাই এ থেকেও বিরত থাকা উচিত। যদি কারও ক্ষেত্রে তা নিশ্চিতভাবে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই নাজায়েজ হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া সিগারেট, জর্দা, গুল সবকিছুর মূলে রয়েছে একই জিনিস, তা হলো তামাকপাতা। তাই গবেষক ডাক্তাররা জর্দা-গুল ইত্যাদি তামাকজাতীয় দ্রব্যকে পরোক্ষ ধূমপান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ডা. জাহাঙ্গীর এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, সুপারি এবং জর্দা দুটিতেই ক্যানসারের মারাত্মক ঝুঁকি আছে। যা বিভিন্ন রোগীর ওপর পরীক্ষা করে বাস্তবে পাওয়া গেছে। তামাকপাতা চিবিয়ে খাওয়া, চিবিয়ে রস পান করা, জিহ্বার নিচে রেখে রস পান করা, জ্বালিয়ে ধোঁয়া পান করা ইত্যাদি সব পদ্ধতির একই লক্ষ্য তামাকের নির্যাস আস্বাদন করা। ক্ষতির দিক থেকেও তেমন কোনো ব্যবধান নেই।
ধূমপান করা ও তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন করা বিভিন্ন কারণে নাজায়েজ। বিড়ি, সিগারেট, তামাক, জর্দা, গুল অপবিত্র জিনিস। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল ও অপবিত্র জিনিস হারাম করা হয়েছে (সুরা আরাফ-১৫৭)।’
ধূমপায়ীদের মুখের দুর্গন্ধে মানুষ কষ্ট পায়, যা পৃথক একটি পাপ। যারা ধূমপান করে, জর্দা খায় ও গুল ব্যবহার করে তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও অন্যরা ঠিকিই এর গন্ধে কষ্ট পায় ও বিরক্ত হয়। আসলে যে অভ্যস্ত তার পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব নয়। তামাক, জর্দার চেয়ে অনেক কম দুর্গন্ধ কাঁচা পিঁয়াজ ও রসুন খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এই দুর্গন্ধযুক্ত গাছ থেকে খাবে (পিঁয়াজ, রসুন) সে যেন আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। নিশ্চয়ই যার দ্বারা মানুষ কষ্ট পায় তার দ্বারা ফেরেশতাও কষ্ট পায় (বুখারি, মুসলিম)।’ দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থায় নামাজ আদায় করলে নামাজ হয়ে যাবে। তবে এ অবস্থায় নামাজ মাকরূহে তাহরেমি, হারামের নিকটবর্তী গণ্য হবে।
সিগারেট, তামাক, জর্দা ও গুল জাহান্নামিদের খাবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখে। এগুলোতে পুষ্টি বা ক্ষুধা নিবারণমূলক কিছুই নেই। জাহান্নামিদের খাবার প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জাহান্নামিদের কাঁটাঝোপ ব্যতীত কোনো খাদ্য নেই। যা তাদের পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করবে না (সুরা গাশিয়াহ-৬-৭)।’
বিড়ি, সিগারেট, তামাক, জর্দা, গুল ইত্যাদি নেশা ও মাদকজাতীয় দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। মাদক ইসলামে হারাম এবং সামাজিকভাবেও নিষিদ্ধ। এসবের আড়ালে বৃদ্ধি পায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। তাই সুস্থ জীবন ও স্বাভাবিক সমাজব্যবস্থা সমুন্নত রাখার জন্য এসব বর্জন করা একান্ত জরুরি। জরুরি ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা। প্রতি বছর বিশ্ব তামাক দিবসে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ধূমপান ও তামাক সেবন থেকে জনগণকে বিরত রাখার জন্য প্রতি বছর বিশ্ব তামাক দিবস পালন করা হয়। কিন্তু ওই সব উদ্যোগের প্রভাবে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই আপন আপন দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু বৈধ করে নিচ্ছে। তামাক, সিগারেট, জর্দা ও গুল নিজ নিজ পছন্দ ও আগ্রহ অনুযায়ী চালিয়ে যাচ্ছে। বৈধ হওয়ার মাপকাঠি বর্তমানে আপন আপন পছন্দ ও আগ্রহ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তারাই সব জোগান দিয়ে যাচ্ছে। দিয়ে যাচ্ছে বৈধ হওয়ার সব যুক্তি-প্রমাণ। অথচ তামাক ও তামাকজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার ও উৎপাদন বন্ধ করা শুধু একজন ব্যক্তির জন্য নয়, পরিবার, সমাজ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য তা প্রয়োজনীয়। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ও জনগণকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সতর্ক অবস্থান নিতে হবে সবাইকে। সবাই মিলে না বলতে হবে যাবতীয় সমাজবিধ্বংসী কার্যক্রমকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক অবস্থানে তামাক ও তামাকজাতীয় যাবতীয় দ্রব্যের ব্যবহার রোধ করতে হবে।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা