যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি বিশাল পণ্যের তালিকা পাঠিয়েছে, যেগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা চায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রাম্প-শুল্ক বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়ে দেশে ফেরার পর তিনি এ তথ্য জানান। মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় প্রায় সব বিষয়ে একমত হয়েছে উভয় দেশ। তবে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় এখনো বাকি আছে।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাঠানো তালিকাটি অনেক বড়, তাই কোন কোন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বহু বছর ধরে অনেক মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে তুলা, গম, সয়াবিন বীজ ও তেলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য রয়েছে।’ তবে নতুন করে আরও পণ্য শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এককভাবে নিতে পারবে না। এ জন্য অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত প্রয়োজন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী শনিবার একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
শুল্কহার নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব : ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত কিছু পণ্যে ৩৫ শতাংশ হারে ট্রাম্প-শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এ শুল্ক কার্যকরের আগেই নতুন হারে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছতে উভয় দেশ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আলোচনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব নিয়ে পরবর্তী বৈঠকও ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীনও ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।
শুধু বাণিজ্য নয়, গুরুত্ব পাচ্ছে নিরাপত্তা : এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক ডিল’-এর আওতায় আনতে চায়। এই চুক্তিতে শুধু শুল্ক বা বাণিজ্য নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন শুধু অর্থনৈতিক দিক দেখছে না, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তারা চাচ্ছে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কীভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলছে, সেটিও মূল্যায়ন করতে।’ তার ভাষায়, একটি কাঠামো তৈরি হচ্ছে এবং এটি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশের লাভের পাল্লা ভারী : বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে আট বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য, যেখানে আমদানি করেছে মাত্র দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ বাণিজ্য ভারসাম্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে এবং ট্রাম্প-শুল্ক আরোপের একটি কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ট্রাম্প-শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে। এরপর বাংলাদেশ সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেয় এবং আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয় যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন উড়োজাহাজ, এলএনজি, তুলা, গম, সয়াবিনসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য। সরকার আশা করছে, ট্রাম্প-শুল্ক কার্যকরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যৌক্তিক ও সমন্বিত শুল্ক চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশ পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনায় একটি সমাধানে পৌঁছবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।