কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন ছিলাধরচর গ্রামের সোহান মোল্লা (২০)। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা না থাকায় জলাতঙ্কের ভয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে র্যাবিক্স টিকা কিনে ডোজ সম্পূর্ণ করতে হয়েছে তাকে। এ চিত্র শুধু ফরিদপুর নয়। কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় র্যাবিক্স, শিশুদের টিকা পেন্টাভ্যালেন্টসহ বেশ কিছু টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। যক্ষ্মা, হাম, রুবেলা, পোলিও, নিউমোনিয়াসহ সব টিকার মজুতে সংকট দেখা দিয়েছে। অর্থ বরাদ্দে দেরি হওয়ায় সময়মতো মিলছে না টিকা। এতে করে বড় সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের টিকা কর্মসূচি। নির্দিষ্ট সময়ে সঠিক ডোজের টিকা না পাওয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে কয়েক লাখ শিশু। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) লাইন ডিরেক্টর ডা. আবদুল্লাহ আল মুরাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে কিছু টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। তবে খুব দ্রুতই সংকট কেটে যাবে। ইতোমধ্যেই টিকা পাইপলাইনে আছে। আশা করছি এ মাসের শেষে টিকা চলে আসবে।’ ইপিআই সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে প্রায় ৪০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। ১১টি রোগপ্রতিরোধে শিশুর জন্মের পর থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত দিতে হয় আট ধরনের টিকা। অধিদপ্তরের হিসাবে যক্ষ্মা, হাম, রুবেলা ও মুখে খাওয়ানোর পোলিও টিকা শেষ হয়েছে জুনে। হেমোফিলিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিসসহ পাঁচটি রোগ প্রতিরোধের টিকা পেন্টাভ্যালেন্টের মজুতও প্রায় শেষ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরে টিকার সংকট হয়েছিল। তখন দেশের অনেক শিশু প্রয়োজনীয় টিকা পায়নি। তিন ডোজের কোনো টিকার এক ডোজ দিয়ে পরের মাসগুলোতে বাকি দুই ডোজ না দেওয়া হলে ‘ইনভ্যালিড ডোজ’ নেওয়া শিশুদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এখনই দেশের ১৩ শতাংশ শিশু ইনভ্যালিড ডোজের শিকার। এ সংখ্যা আগামীতে আরও বেড়ে যাবে। এর ফলে ওই শিশু কিংবা মাকে যে টিকা দেওয়া হচ্ছিল তা কার্যকারিতা হারাবে। এতে মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।’
জানা যায়, ১৯৭৯ সাল থেকে দেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) মাধ্যমে টিকা দেওয়া চলছে। শিশুদের টিকার পেছনে বছরে খরচ ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। ইউনিসেফের মাধ্যমে এসব টিকা কেনে সরকার। এবারের বাজেটে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু চিঠি চালাচালিতে চলে গেছে বেশ কিছু সময়। টিকা কেনার প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় দেশে টিকা আসতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে। ফলে জুলাই-আগস্ট মাসের সিডিউল টিকা পেতে সংকটে পড়তে হচ্ছে দেশের মানুষকে। কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ বলেন, ‘তিন সপ্তাহ ধরে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার সংকট রয়েছে। এ ছাড়া র্যাবিক্স টিকার সংকট রয়েছে। আমরা সংকটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ চাঁদপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গত এক বছরে ঢাকা থেকে অনিয়মিতভাবে টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। প্রয়োজন অনুযায়ী টিকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।’