ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়া, পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং ডলার সংকটে কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত নিট মুনাফা ১৭ শতাংশ কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র জানায়, ১৪টি বহুজাতিক কোম্পানির মোট নিট মুনাফা প্রান্তিকটিতে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬০৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় এক হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। তবে আগের প্রান্তিক অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চের তুলনায় এই মুনাফা ৬ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ফলে ব্যাংকঋণের সুদ বেড়েছে, যার প্রভাব কোম্পানির ব্যয় কাঠামোতে পড়েছে। একই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় সাধারণ ভোক্তারা ব্যয় সংকোচন করেছেন, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিক্রিতে।
লোকসানে বাটা, সিঙ্গার, আরএকে : চলতি প্রান্তিকে বাটা শু বাংলাদেশ, সিঙ্গার বাংলাদেশ এবং আরএকে সিরামিকস উল্লেখযোগ্য লোকসানে পড়েছে। বাটা শু ডিএসইতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রান্তিকটিতে কোম্পানিটির বিক্রি ৩৯ শতাংশ কমে ১৫৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। একই সময়ে কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যেখানে গত বছর তারা মুনাফা করেছিল ১৯ কোটি টাকা। বিক্রয়কেন্দ্রে ভাঙচুর ও সহিংসতার কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে জানানো হয়।
সিঙ্গার বাংলাদেশ ৩১ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ২৫ কোটি টাকা মুনাফা। কোম্পানিটি জানিয়েছে, বিজ্ঞাপন ব্যয়, ওয়ারেন্টি ক্লেইম, ব্যাংক চার্জ ও বন্দরে জাহাজ আটকে থাকাসংক্রান্ত ড্যামারেজ খরচ বৃদ্ধি লোকসানের জন্য দায়ী। আরএকে সিরামিকস ১৫ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান করেছে। এক বছর আগে তাদের লোকসান ছিল মাত্র এক কোটি টাকা। কোম্পানিটির ভাষ্য, বাজারে নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোও চাপে : ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) জানিয়েছে, চলতি প্রান্তিকে তাদের নিট মুনাফা ৮১ শতাংশ কমেছে। কোম্পানিটি জানায়, বিক্রি কমে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতির কারণে খরচ বৃদ্ধি এবং ঢাকা কারখানা স্থানান্তরজনিত ব্যয় এই পতনের জন্য দায়ী।
ব্যতিক্রম রবি ও মেরিকো : চ্যালেঞ্জিং বাজার পরিস্থিতিতেও কিছু বহুজাতিক কম্পানি মুনাফা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। রবি আজিয়াটা প্রান্তিকটিতে ১৪০ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধির তথ্য দিয়েছে। কোম্পানির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৫৭ কোটি টাকায়। পরিচালন ব্যয় হ্রাস, ডিজিটাল কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও টাওয়ার শেয়ারিংয়ের কারণে এ সাফল্য এসেছে বলে জানানো হয়। মেরিকো বাংলাদেশ-এর রাজস্ব ও মুনাফা উভয়ই বেড়েছে। ব্যক্তিগত যত্ন পণ্যে স্থিতিশীল চাহিদা এবং কার্যকর খরচ নিয়ন্ত্রণ তাদের মুনাফা ধরে রাখতে সহায়তা করেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়ায় ভোক্তাপণ্য কোম্পানিগুলোর বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকঋণের সুদ বেড়ে যাওয়ায় পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। যেসব কোম্পানির পরিচালন দক্ষতা ভালো, তারা টিকে গেছে। কিন্তু ঋণনির্ভর কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ বাড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুদের উচ্চহার ও মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভবিষ্যতেও এই খাতে মুনাফা বাড়ানো কঠিন হবে, বিশেষ করে নির্মাণসংশ্লিষ্ট খাতে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ