সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের সব কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়নি। চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধেও পিছিয়ে আছে অনেক কারখানা।
এর বাইরে বন্ধ থাকা কয়েকটি কারখানার বেতন-ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধ নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা চলছে। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দেশের অসংখ্য শিল্প-কারখানায় ঈদের আগে এখনো বেতন-বোনাস হয়নি। পোশাক ও বস্ত্র খাতের শিল্প-কারখানা, বেপজার অধীন কারখানা, পাটকলসহ অন্য আরো কিছু খাত মিলে মোট ৯ হাজার ৬৯৫টি শিল্প-কারখানার মধ্যে মার্চ মাসের বেতন দেয়নি সাত হাজার ২২৪টি কারখানা।
আর এখনো ১২২টি পোশাক কারখানায় ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন এবং ৩০টিতে জানুয়ারি মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এখনো ঈদ বোনাস দিতে পারেনি ৭২৩টি পোশাক কারখানা। জানুয়ারি বা এরও আগের বেতন বকেয়া রয়েছে ৩০টি কারখানায়।
শিল্প পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও বেপজার অধীন মোট দুই হাজার ৮৯০টি পোশাক কারখানা বর্তমানে চালু রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে দুই হাজার ৭৬৮টি প্রতিষ্ঠান।
আরো ৩০টি কারখানায় শ্রমিকদের জানুয়ারি বা তার আগের মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। চলতি মার্চের জন্য ৪২২টি কারখানা শ্রমিকদের অর্ধেক বেতন অগ্রিম পরিশোধ করেছে। শ্রমিকদের বেতন পরবর্তী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধের কথা থাকলেও এখনো কিছু কারখানা তা মানতে পারেনি।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, পাটকলসহ অন্য শিল্প-কারখানাগুলো মিলিয়ে দেশের মোট ৯ হাজার ৬৯৫টি কারখানার মধ্যে ঈদুল ফিতরের বোনাস পরিশোধ করেছে ছয় হাজার ৬৭৩টি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে মার্চের বেতন পরিশোধ করেছে এক হাজার ৮৩৫টি কারখানা। এখনো সাত হাজার ৮৬০টি কারখানায় মার্চের বেতন বকেয়া রয়েছে। এটি মোট কারখানার প্রায় ৮১.৭ শতাংশ।
এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করায় ১২টি কারখানার মালিকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিদেশ যেতে পারবেন না।
গাজীপুরে বেতন-বোনাস না দিয়ে কারখানায় তালা :
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ না করে কারখানায় তালা দিয়ে বন্ধের প্রতিবাদে গাজীপুর মহানগরের সিগনেচার অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈর উপজেলার হ্যাগ নিটওয়্যার কারখানার শ্রমিকরা গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে কিছু শ্রমিক কারখানার সামনে এবং কিছু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।
একইভাবে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের কামরাঙ্গাচালা এলাকার হ্যাগ নিটওয়ার কারখানার শ্রমিকরা জানান, গত ২৫ মার্চ ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বেতন এবং ঈদ বোনাস পরিশোধের কথা ছিল। ওই দিন তাঁরা কারখানায় গিয়ে দেখেন গেটে তালা ঝুলছে। কারখানার মালিক, সিইওসহ সব কর্মকর্তা পালিয়ে গেছেন। বাধ্য হয়ে বকেয়া বেতন ও বোনাসের জন্য তাঁরা গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
ছুটি বাড়ানোর দাবিতে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের বিক্ষোভ :
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে ঈদের ছুটি বৃদ্ধির দাবিতে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল শহরের এস এম মালেহ রোড এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এতে ওই সড়কে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে পথচারীসহ সাধারণ মানুষ। শ্রমিকদের ছুটির দাবি মেনে নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
৫ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি :
ঈদের আগে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও বোনাসের দাবিতে পাঁচ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট, টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড, অ্যাপারেল আর্ট লিমিটেড—এই চারটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম