গাইবান্ধার ফুলছড়িতে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক মাসে প্রায় ২৫০ বিঘা ফসলি জমি, ১৫ বাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ। বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই অন্যের জমিতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে ভাঙনকবলিত মানুষের দুর্ভোগ। কেউ ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেউ গাছ কেটে নিচ্ছে। কেউ জমি থেকে অপরিপক্ব ফসল কেটে নিচ্ছে। যাওয়ার জায়গা যাদের নেই, তারা নদের পারে বসে হা-হুতাশ করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক মাসে ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে ফুলছড়ির রতনপুর গ্রামের প্রায় ২৫০ বিঘা রোপা আমন ধানের জমি ও ১৫টি বাড়ি এবং অসংখ্য গাছপালা। ভাঙনকবলিতদের অনেকেই সামর্থ্যবান গেরস্থ ছিল। তাদের এখন অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে খেতে হয়। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ও একটি মসজিদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, রতনপুরে প্রতিদিন ব্রহ্মপুত্র পারে ৪ থেকে ৫ ফুট পরিমাণ এলাকা ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে। এক মাসে রতনপুর গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তারের (৭০) ২ বিঘা ধানের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জমি গেছে, এখন ঘরবাড়ি হুমকির মুখে। যেভাবে প্রতিদিন ভাঙছে, এভাবে চলতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যে গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’ একই গ্রামের কৃষক জামায়াত আলী (৪০) বলেন, ‘এক মাসে আমার ৩ বিঘা জমির আমন ধানসহ নদীতে চলে গেছে। কখন বসতবাড়িও চলে যায়, সে ভয়ে আছি। খুব বিপদে আছি আমরা।’ এ গ্রামের আমিরন বিবি (৬০) বলেন, ‘আগে হামার ম্যালা জমিজমা, ঘরবাড়ি আচিল। একন সগকিচু নদির মদ্দে গ্যাচে। জমিজমা, ঘরবাড়ি নদিত গ্যাচে, হামরা তার খতিপূরণ চাইনে, নদি ভাঙন থাকি হামার ঘরোক বাঁচাও বাবা।’ গৃহিণী রুপালি বেগম (৫০) বলেন, ‘নদী হামার ঘরে সবকিচু কাড়ি নিচে। ১ বিগে জমি আচিল, ২৫ দিন আগোত নদীত চলি গেচে।’ উড়িয়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছায়দার আলী বলেন, ‘ইউএনও স্যার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন ও সাংবাদিকরা ভাঙন এলাকা দেখে গেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি কেউই। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে।’ ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎবন্ধু ম ল বলেন, ‘ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে।’
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ‘নদে পানি বাড়া-কমার সময় ভাঙন দেখা দেয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি প্রকল্পের সমীক্ষা করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।’