চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার রেলপথে লেভেল ক্রসিংয়ে ২০ মাসে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ রেলপথে ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের ৫৬টিতে কোনো গেটম্যান এবং প্রতিবন্ধকতা নেই। ফলে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। রেলপথটি যেন মারণফাঁদ হয়ে উঠেছে। মানুষের পাশাপাশি মারা পড়ছে ও আহত হচ্ছে বন্যহাতিও। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর চালু হওয়া এ রুটে প্রথমে এক জোড়া ট্রেন চললেও এখন চলছে চার জোড়া। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে ঝুঁকিও বেড়েছে এ রেলপথে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. সবুক্তগীন বলেন, ‘কক্সবাজার রেলপথের সব লেভেল ক্রসিং গেট অনুমোদিত। এখনো সবখানে লোকবল দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সব গেটে সতর্কতামূলক লেখা ও ফলক আছে। রেলপথ নিরাপদ করতে মানুষের চলাচলের জন্য ৪৬টি আন্ডারপাস করা হয়েছে। তবে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।’
সূত্র জানান, ২ আগস্ট কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগরে মারা যান চারজন। গত বছরের ৯ নভেম্বর একই ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবকের মৃত্যু হয়। এ বছরের ৭ এপ্রিল ঈদগাঁও উপজেলার পালাকাটায় লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান এক মোটরসাইকেল আরোহী। ২ আগস্ট রশিদনগরে চারজনের মৃত্যুর পর জনতা রেললাইন অবরোধ করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর ৬ আগস্ট ওই লেভেল ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার নির্মাণ করা হয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ১৬টিতে প্রতিবন্ধক গেট এবং গেটম্যান রয়েছে। ৫৬টিতে কোনো প্রতিবন্ধক গেট ও গেটম্যান নেই।
রেলওয়ে পুলিশের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ২০ মাসে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের ২ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত বছর মারা গেছেন ১৭ জন। রেলপথের লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এবং রেললাইন পারাপার হতে গিয়ে কাটা পড়ে এসব মৃত্যু ঘটে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চালু হলেও প্র্রয়োজনীয় জনবল এখনো অনুমোদন দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় অস্থায়ীভাবে কিছু গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, রামু-কক্সবাজার সেকশনে আটটি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে গেটম্যান রয়েছে। ডুলাহাজারা-ইসলামাবাদ সেকশনের ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ১২টি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান আছে একটিতে। ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ চকরিয়া-ডুলাহাজারা সেকশনে নয়টি ক্রসিংয়ে গেটম্যান আছে তিনটিতে। দোহাজারী-সাতকানিয়া সেকশনে আটটির মধ্যে চারটিতে এবং হাসিমপুর-দোহাজারী সেকশনের একটি গেটে কোনো গেটম্যান নেই। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সেকশনের আটটির মধ্যে তিনটিতে গেটম্যান রয়েছে। হারবাং-চকরিয়া সেকশনের চারটির মধ্যে দুটি, লোহাগাড়া-হারবাং সেকশনের পাঁচটির মধ্যে একটিতে গেটম্যান রয়েছে।