শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা নদীতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত পাঁচ দিনে বিলীন হয়েছে ৩২টি বাড়িঘর। ধস নেমেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটারে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও শতাধিক স্থাপনা, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে দুই কিলোমিটার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। কংক্রিটের সিসি ব্লক তলিয়ে যায়। আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। বাঁধ সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাউবোকে। গত বছর বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল সেখানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়। ঈদুল ভিতরের দিন ভোররাতে সংস্কার করা বাঁধের ১০০ মিটারসহ পাশে ভাঙন শুরু হয়। এক দিনের মধ্যে আড়াই শ মিটার নদীতে ভেসে যায়। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে নতুন করে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই শঙ্কা কাটতে না কাটতে গত সোমবার বিকালে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয় বাঁধে। ওইদিন মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীতে বিলীন হয় ১০টি বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় আরও ১০টি দোকান।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন মাঝি বলেন, ‘বিকালে হঠাৎ ভাঙনের খবর পাই। দেখতে না দেখতে চোখের সামনে বেশ কিছু বাড়িঘর নদীতে চলে যায়। যে যেভাবে পারছে ঘরবাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে।’
বাজারের ব্যবসায়ী মোকলেস মাদবর বলেন, ‘যার যার মালামাল তার পরিবারের সদস্যরা সরিয়ে নিচ্ছেন। আমরা বিপদের মধ্যে আছি। তাই যেভাবে সম্ভব ভাঙন রোধ করা হোক। একে একে দোকানপাট ও ঘরবাড়ি নদীতে ভেসে যাওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৩০টি বাড়ি ও ২০টির বেশি দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। মমিন আলী মাঝিকান্দি এলাকার ইউপি সদস্য জলিল সরদার বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীতে স্রোত বেশি। বাঁধে আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে।’ জাজিরার ইউএনও কাবেরী রায় বলেন, ‘এলাকায় ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে এবং ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘বাঁধের আনুমানিক ৪০০ মিটারে ভাঙন হয়েছে। ডাম্পিংয়েও কাজ হয়নি। এখন জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। বৃষ্টির কারণে কাজে সমস্যা হচ্ছে।’