আজ থেকে তিন মাস সুন্দরবনে বনজীবী (জেলে, বসওয়ালী ও মৌয়ালী) ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনবিভাগ। মূলত প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন করতেই বনবিভাগের এ উদ্যোগ। বিশেষ করে ১লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ডিম দিয়ে থাকে। আর এ সময়ে বন্যপ্রাণীদের প্রজনন ঘটে থাকে। এছাড়া গাছপালার বীজ থেকে চারা গজিয়ে বের হয়। তাই মাছ, গাছ ও বন্যপ্রানীর প্রজননের স্বার্থে এই তিন মাস বনের অভ্যন্তরে বনজীবী ও পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে বনজীবী ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের সচেতনসহ নানা প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে বনবিভাগ। নিষেধাজ্ঞা মৌসুম নির্বিঘ্ন করতে বনবিভাগের পাশাপাশি তৎপর থাকছে মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশ। তবে এ মৌসুম নির্বিঘ্ন করা গেলে সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এনিয়ে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রশাসনের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনে ২১০ প্রজাতির মাছ, ৫২৮ প্রজাতির গাছপালা ও ৩৩৪ প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। বিশেষ করে ১লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হলো অধিকাংশ প্রজাতির মাছ, গাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম। প্রজনন স্বার্থে এই মৌসুমে জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালী ও পর্যটকেরা বনে প্রবেশ করতে পারবে না। এই নিষিদ্ধ সময়ে বনবিভাগের পাস-পারমিট প্রদাণ বন্ধ থাকবে। সুতরাং এই সময়ে কেউ বনে ঢুকলে তাকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, মোংলা এলাকায় সুন্দরবন নির্ভরশীল প্রায় ২ হাজার বনজীবী রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে জেলে, বাওয়ালী ও মোয়ালী। তাদেরকে যাতে এই নিষেধাজ্ঞার সময় সহায়তা প্রদান করা যায় সেজন্য বনবিভাগ ও মৎস্য বিভাগ কাজ করছে।
মোংলা জালিবোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই তিনমাসের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের অলস সময় পার করতে হবে। এতে আর্থিক কষ্টে মানবেতর জীবন কাটাতে হবে এখানকার প্রায় ৮ শতাধিক পর্যটনবাহী নৌযান পরিবারকে। তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞায় বনজীবীরা সহায়তা পেলেও পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত নৌযান কর্মচারীরা কোনো ধরণের সহায়তাই পান না।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় (বাগেরহাট) বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নিষেধাজ্ঞার মৌসুমটা আমরা কার্যকর করতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। আর নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান থাকবে কঠোর।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল