চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের অন্যতম সবুজ আঙিনা বিপ্লব উদ্যান নিয়ে গত বছরের ৩ অক্টোবর এক গণশুনানির আয়োজন করেছিল। সভায় ‘বিপ্লব উদ্যানে নতুন করে কোনো স্থাপনা না করার’ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত ৭ নভেম্বর চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন পরিদর্শনে গিয়ে ‘নগরের বিপ্লব উদ্যানকে গ্রিন পার্ক’ করার ঘোষণা দেন। গত ১১ নভেম্বর চসিকের সাধারণ সভায় বিপ্লব উদ্যান নিয়ে আগে করা চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বলা হয়েছিল, ‘বিপ্লব উদ্যানে বাণিজ্যিক স্থাপনার চেয়ে সবুজায়নকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।’ গত ২৩ জুন বাজেট অধিবেশনেও চসিক মেয়র বলেছিলেন ‘বিপ্লব উদ্যানে নতুন কোনো দোকান নির্মাণ করা হবে না’। কিন্তু স্থাপনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েও চসিক সেখানে ফের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের চুক্তি করে। এর আগে ২০১৮ ও ২০২৩ সালে দুই দফায় বিপ্লব উদ্যানে স্থাপনা করতে চুক্তি করেছিল। উদ্যানের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নতুন করে নূর হাফিজ প্রপার্টিজ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য চুক্তি করেছে চসিক।
জানা যায়, বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে চসিক গত ৩ জুন একটি চুক্তি করে। চুক্তি মতে, বর্তমান এক তলা ভবনটি চার তলা পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। দ্বিতীয় তলায় নগরবাসীর ‘গুণগত’ সময় কাটানোর জন্য আধুনিক সবুজবান্ধব আরবান লাউঞ্জ নির্মাণ, তৃতীয় তলায় ইনডোর গেমসের জন্য কফিশপসহ একটা অবকাঠামো নির্মাণ ও আরেক অংশে উন্মুক্ত স্থানে বিশ্রামের স্থানসহ কফিশপ এবং চতুর্থ তলায় চট্টগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সংবলিত প্রদর্শনী কেন্দ্র করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিনিয়োগের বিপরীতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগও রয়েছে। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা মুনা বলেন, সুস্থভাবে বাঁচতে উপযুক্ত আলো-হাওয়ার সবুজ মুক্তাঙ্গন জরুরি। গ্রীষ্মকালে ক্রমবর্ধমান অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঠেকাতে, বর্ষাকালে বন্যা ও জলজটের প্রকোপ কমাতে উন্মুক্ত পরিসরগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু উন্নয়নের নামে সিমেন্ট-কংক্রিটের আবরণে খোলা জায়গা ঢেকে দেওয়ায় ‘ওয়াটার রিটেনশন’ (মাটির জলধারণ করার ক্ষমতা) এলাকাগুলো ধ্বংস হচ্ছে। বিপ্লব উদ্যানের মতো সবুজ মাঠ আগে বৃষ্টির সময় অতিরিক্ত পানি ধারণ করত, পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা কমাতে সাহায্য করত, সেটি এখন হচ্ছে না। উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। তাই বিপ্লব উদ্যানে অবকাঠামো ভিত্তিক উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে, প্রাকৃতিক সবুজ উদ্যান ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ভবনটি বর্ধিত করা হবে। উদ্যানের খোলা স্থানে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। আগে যে দোকানগুলো আছে, সেখানেই স্থাপনা করতে হবে। এর মাধ্যমে চসিকের আয় বাড়বে। ১৯৭৯ সালে নগরের গুরুত্বপূর্ণ ২ নম্বর গেট এলাকায় এক একর জায়গায় বিপ্লব উদ্যান গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে সেখানে ২১টি দোকান ও দুটি শৌচাগার আছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, উদ্যানে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের বেশি কংক্রিট অবকাঠামো রাখা যাবে না। আন্তর্জাতিকভাবে ২ শতাংশও অনুমোদন করে না।