টানা বৃষ্টিতে সারা দেশের জনজীবনে বিপর্যস্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায়ই তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। দেশের নিচু এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব জায়গার কোথাও হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে, কোথাও জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, মৎস্য ঘের। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফেনী : ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থান ভেঙে গেছে। এতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, পরশুরামের মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা ১২.৫৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় সর্বশেষ ১৩.৯২ মিটার উচ্চতায় পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ৭টায় নদীর পানিপ্রবাহ ছিল ৭.০০ মিটার উচ্চতায়। রাত ১০টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টায় মুহুরী নদীর পানি বেড়েছে ৬.৯২ মিটার। অর্থাৎ ২২ ফুট ১০ ইঞ্চি বেড়েছে।
পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি, শালধর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পড়া এলাকার দুটি স্থানে ভেঙেছে। এ ছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি স্থানে ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। এতে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে ফেনীর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ও ফেনীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, শহরে ও পরশুরাম এবং ফুলগাজীর অনেক বাসা, বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক মিটার এবং সাব-স্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে এর পরিধি বাড়তে পারে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় তিনটি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। এরই মধ্যে শতাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে। তাদের জন্য শুকনা খাবার ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল (৯ জুলাই) উপজেলার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। যা চলতি বর্ষা মৌসুমের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে দুই দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ফলে চেঙ্গি ও মাইনি নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানি ঢুকেছে। খাগড়াছড়ি শহরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া, কালাডেবাসহ কয়েকটি এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। খাগড়াছড়ি বাজারের সবজি বাজার কেন্দ্রীয় শাহী মসজিদের পেছনের সড়কটিও পানিতে ডুবে গেছে। একইভাবে গরুর বাজারও পানিতে ডুবে আছে।
কক্সবাজার : টানা ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারের জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অনেক বাড়িঘর পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধসের ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়াও জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়াসহ ৯টি উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অনেক সড়ক ও উপসড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে এবং পাহাড় ধসের শঙ্কা এখনো বিদ্যমান। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৭৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সমুদ্র উত্তাল রয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, উখিয়ার ১০টি ও টেকনাফের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া উখিয়ার তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য অনুযায়ী, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ৮টি, হ্নীলা ইউনিয়নে ৭টি, টেকনাফ পৌরসভায় ৫টি, সেন্ট মার্টিনে ৫টি, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ৫টি, সাবরাং ইউনিয়নে ৭টি এবং বাহারছড়া ইউনিয়নে ৮টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার চরম দুর্ভোগে রয়েছে।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের যমুনা নদীতে সাড়ে ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারী বর্ষণে যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাই ও বংশাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কিছু কিছু স্থানে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এর ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তিন দিন ধরে থেমে থেমে ভারী বর্ষণে জেলার সদর উপজেলাসহ নাগরপুর, ভুয়াপুর, গোপালপুর, বাসাইল ও মির্জাপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাখিল রায়হান বলেন, জেলায় সব নদ-নদীর পানি প্রায় সাড়ে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যমুনাসহ সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সাতক্ষীরা : এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডসহ সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে আমন বীজতলা, আউশ ধান, সবজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের। এদিকে সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ নিম্ন এলাকার দোকানপাট, বসতবাড়ি, রান্নাঘর, বাড়ির আঙিনা ও রাস্তাঘাটে পানি জমে আছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এলাকাবাসী।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, এক সপ্তাহে সাতক্ষীরায় ২৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যার মধ্যে গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০২ মিলিমিটার।
খুলনা : কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে খুলনার গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সবখানে পানি জমে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নগরীর টুটপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, মহিবাড়ি খালপাড়, আহসান আহমেদ রোডসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, তেরখাদায় ভারী বৃষ্টিতে নার্সারি সবজি, ধানের খেত ও মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। খুলনা-সাতক্ষীরা ও খুলনা-মোংলা সড়কে পানি জমে গর্ত তৈরি হয়েছে। পাইকগাছা মেইন সড়কের গোলাবাটি, সলুয়া, নতুন বাজার ও জিরো পয়েন্ট এলাকার রাস্তায় পানি জমে পিচ উঠে গেছে। যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
বান্দরবান : গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের জনজীবনে ভোগান্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে। শহরের লোকজন চলাফেরা করতে পারলেও পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীরা বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবান জেলার সাঙ্গু অববাহিকায় ১০১ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং মাতামুহুরী অববাহিকায় ৬৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে উজান থেকে পানি নেমে আসছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, বুধবার সকাল ৯টায় পদ্মার পানি ছিল ১২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া ৮ জুলাই ১২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার, ৭ জুলাই ১১ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার, ৬ জুলাই ১১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, ৫ জুলাই ১১ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, ৪ জুলাই ১১ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার ও ৩ জুলাই ১১ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার ছিল।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, ভারতের বন্যার কারণে দেশটি ফারাক্কার গেট খুলে দিয়েছে। এজন্য রাজশাহীতে পদ্মায় পানি বাড়ছে। পদ্মা নদীর চরখিদিরপুর এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে গেছে। জেলার পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ী অংশে নদীতে ভাঙনও দেখা দিয়েছে।
ঝিনাইদহ : আষাঢ়ের অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহের জনজীবন। কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদ জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ। শহরের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল সকাল থেকে শহরের সদর হাসপাতাল, বাঘা যতীন সড়ক, পোস্ট অফিস মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে। ফলে রিকশা, ইজিবাইক ও ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসমুখী মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
একই চিত্র জেলার বিভিন্ন উপজেলা, বিশেষ করে কালীগঞ্জ, মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপার গ্রামীণ এলাকায়। বৃষ্টির কারণে খেতখামারে পানি জমে গেছে। ফলে কৃষকরা শঙ্কায় পড়েছেন। আগাম রোপণকৃত আমন ধান ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। মতিয়ার রহমান নামের এক ইজিবাইক চালক বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য কোনো যাত্রী পাচ্ছি না। আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।’
মোংলা : কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে মোংলা পৌর শহরে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে পুকুর, রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। পানিতে ডুবেছে ঘরের চুলাও। তাই কয়েক দিন ধরে রান্না বন্ধ আছে অনেক পরিবারের। ঘরে পানি ওঠায় অনেকে খাট, মাচা ও টোঙ্গের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকাই জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানি নামার ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিপাতে এখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কষ্টে দিন পার করছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
এ ছাড়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের নিচু এলাকায়ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে বেড়েছে নদীর পানিও। তাই জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে পশুর নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা অমল কৃষ্ণ সাহা বলেন, বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না কমলে পানিও কমবে না। তারপরও পানি নামানোর জন্য পৌর কর্মচারীদের জলাবদ্ধ এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জেলায় এক দিনে পানি বেড়েছে ১৯ সেন্টিমিটার। পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর সদর, কোম্পাানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ কবিরহাট, সুবর্ণচরে বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অনেকের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। এ চারটি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, রামপুর ও চর এলাহী ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী ও বামনী নদীর তীরবর্তী এলাকা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মুছাপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ সড়ক ডুবে গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে লোকজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
অপরদিকে, জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। পাড়ামহল্লায় বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নোয়াখালী পৌর শহরের স্টেডিয়ামপাড়া, ডিসি সড়ক, জজ কোর্ট, জামে মসজিদ সড়ক, ইসলামিয়া আলফারুক স্কুল সড়ক, জেলখানা সড়ক এলাকা, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাউজিংসহ বেশির ভাগ এলাকার সড়কে হাঁটুর কাছাকাছি পানি উঠেছে। এ ছাড়া এসব এলাকার নিচতলা ও কাঁচা ঘরে পানি ডুকেছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। চলতি বর্ষায় শহরের বেশির ভাগ সড়কে খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় সড়কগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
কুমিল্লা : দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ডুবে গেছে নগরীর প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলি। দুর্ভোগ বেড়েছে জনজীবনে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের আয়-রোজগার।
সরেজমিন গতকাল সিটি কপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে সমনের সড়ক, বিসিক শিল্পনগরী এলাকা, জেলা স্কুল সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, দক্ষণ চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়ক, ঠাকুরপাড়া, ছায়া বিতান ও শুভপুরসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলোয় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
কামরুল হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, বর্তমানে কুমিল্লা নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এটা এক-দুই দিনের না, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠারও আগের। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।
বরিশাল : চার দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলোতে হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজে যাওয়া ছাড়াও জরুরি কাজের জন্য বের হওয়া নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়ছেন। নগরবাসীর অভিযোগ- বর্ষা মৌসুমে ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কারসহ অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে পানি নামতে পারছে না। এ নিয়ে নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বৃষ্টির প্রভাবে নগরীর মেজর এম এ জলিল সড়কের বটতলা থেকে চৌমাথা পর্যন্ত পুরো সড়কটিতে হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া জীবনানন্দ দাশ সড়কের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের এলাকা, অক্সফোর্ড মিশন রোড, মুন্সির গ্যারেজ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া বরিশাল নগরীর পলাশপুর, ভাটিখানা, রসুলপুর, মোহাম্মদপুর, কাউনিয়া ও আলেকান্দার কিছু অংশ, ধান গবেষণা রোড, বিএম স্কুল রোড, আমানতগঞ্জ, করিম কুটির, মুনসুর কোয়ার্টার, ব্রাউন কম্পাউন্ড, শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেন, রূপাতলী হাউজিংসহ নিচু সড়কে পানি উঠেছে। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে সময় কাটাচ্ছে এসব নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। তবে অতীতের মতো সদর রোড, আগরপুর রোড, প্যারারা রোডসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চলেও অতীতের তুলনায় কিছুটা কম জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকা ও রাস্তাঘাট। কারও কারও পুকুর ভেসে মাছ বেরিয়ে গেছে। এতে করে যেমন বেড়েছে ভোগান্তি তেমনই কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ। অন্যদিকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় লক্ষ্মীপুরে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন রামগতি আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক মো. সোহরাব হোসেন। এদিকে লক্ষ্মীপুর শহরের এবং আশপাশের এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা বেহাল এবং যত্রতত্র ভরাট হয়ে পড়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছেন পৌরবাসী। গতকাল দুপুরে সরেজমিন বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার বিভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। টানা বর্ষণে জেলা শহর কলেজ রোড, পিটিআই মোড়, রেহান উদ্দিন ভূঁইয়া সড়ক, জেবি রোড, কালু হাজি রোডসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, যানবাহনচালক ও পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।