টানা বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়ে নেমে এসেছে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ। গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো ভারী বৃষ্টির কারণে রাজধানীর অনেক এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জলাবদ্ধতা, যানজট ও রাস্তায় পানি জমে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ এবং স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা। অনেকেই সকালে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাসায়ই থেকে গেছেন। দিনমজুর, রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছেন চরম দুর্দশায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধানমন্ডির হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী, নারিন্দা, দয়াগঞ্জ, টিকাটুলি, স্বামীবাগ ও গেন্ডারিয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, এ এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে আছে। পানি চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। মানুষের চলা-ফেরায় ভোগান্তি সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না।
পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার বাসিন্দা তৌফিক হাসান বলেন, জলাবদ্ধতা আর যানজট নগরজীবন অতিষ্ঠ লাগছে। রাজধানীর কোনো জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হলেও বংশালে জলাবদ্ধতা হবেই। কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতায় আমরা নাকানিচুবানি খাচ্ছি। তবুও সিটি করপোরেশন থেকে এ জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন রিকশাচালকরা। রাস্তায় যাত্রী নেই, ভাড়া মেলে না, আয়ের পথ বন্ধ। মালিবাগ এলাকায় দোকানের ছাউনির নিচে রিকশা ফেলে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকজন চালক। তাদের একজন হামিদ। তিনি বলেন, লোকজন বের হয় না, তাই ভাড়া পাই না। রিকশার চাকা না ঘুরলে খাওয়াও জোটে না। কয়েকদিন ধরে যা বৃষ্টি হচ্ছে, এতে না খেয়ে থাকতে হবে মনে হয়। বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরাও। একজন যাত্রী জানান, মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য রাইড বুক করেছিলেন। কিন্তু যানজটে আটকে শাহবাগেই নামতে হয়েছে। চালক জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছি। আজও সকাল থেকে কোনো ভাড়া পাচ্ছি না। এখন শরীর খারাপ লাগছে। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ও পানি নিষ্কাশনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কাজ করছে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি এবং ডিএনসিসি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ডিএসসিসির আওতাভুক্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিএসসিসির বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া, ওয়ার্ড-ভিত্তিক ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হলে, ডিএসসিসির কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৭০৯-৯০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে জানালে জলাবদ্ধতা নিরসনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।