চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ খোলা-পরিত্যক্ত জায়গা ও নালা-নর্দমা বর্জ্যে ভরপুর। এখানে মশা বংশবিস্তার করছে। মশার আক্রমণে হচ্ছে ডেঙ্গু। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নিয়মিত নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার কথা। কিন্তু চসিক সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
চসিক মশক নিধনের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও তা অপ্রতুল। মশক নিধনে চসিকের বরাদ্দও নামমাত্র। নগরে মোট নালা-নর্দমা আছে ১৬১ কিলোমিটার। জানা যায়, চসিক ২৩ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করে। এখানে মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও বরাদ্দ রাখা হয়েছিল মাত্র ৮ কোটি টাকা। অথচ বছরজুড়ে মানুষ এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বাজেট অধিবেশনে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯টি খাল থেকে ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪১ লাখ ঘনফুট মাটি ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। নালা-নর্দমা পরিষ্কারে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্ষায় আরও ২০০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আছে। মশক নিধনে আধুনিক পদ্ধতি ও আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড ব্যবহার শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে বছরজুড়েই থাকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। গত মঙ্গলবার এক দিনে চট্টগ্রামে আটজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এর মধ্যে নগরে চারজন ও উপজেলায় চারজন। আক্রান্তরা সবাই পুরুষ। গত জুন মাসে মোট আক্রান্ত হয় ১৭৬ জন। চলতি বছর মোট আক্রান্ত হন ৪৫৩ জন এবং মারা যান দুজন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ কমেনি। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে। তবে তা নিয়ন্ত্রিত। চিকিৎসার জন্য মহানগর এবং উপজেলায় আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া নগরের নালা-নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি। বর্তমানে এটুকু বলা যায়, এবার বর্ষা মৌসুম চললেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ গতবারের চেয়ে এখনো কম আছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। কোনোমতেই বাড়ির আঙিনায় যেন কোনো ময়লা পড়ে না থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো অনেক উন্ম্ক্তু স্থান আছে, যেখানে এডিস মশা জন্ম নেয়। তাছাড়া নগরের অধিকাংশ নালা-নর্দমা ও ড্রেন বর্জ্যে ভরপুর। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় এসব স্থানে জন্ম নেয় এডিস মশা। চসিক নালা-নর্দমা ও ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কারের কথা বলে এলেও বাস্তবচিত্র ভিন্ন। প্রতিনিয়তই নালা-নর্দমা ও ড্রেনগুলো বর্জ্যে ভরা থাকে। অনেক এলাকায় খোলা স্থানে ময়লা ও পানি জমে থাকে। অধিকাংশ নালার অবস্থা বেহাল। আবার অনেক নালা-নর্দমা নিশ্চিহ্ন, কিছু বর্জ্যে ভরাট, কিছু দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় না। সেদিকে চসিকের কোনো নজর নেই।