আজকাল কয়েকটি দেশে ফোন চুরির ঘটনা- এত বেশি বেড়েছে যে, এটি এখন নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরেরা মোটরবাইকে উঠে পথচারীদের হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিচ্ছে, রেস্টুরেন্টের টেবিল থেকে তুলে নিচ্ছে, অথবা মেট্রো কিংবা গণজমায়েতে নির্দ্বিধায় পকেট মারছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন মতে, কেবল ব্রিটেনে প্রতিদিন প্রায় ২০০টি ফোন চুরি হয়, আর সে দেশের সরকার এই অপরাধ বন্ধে প্রযুক্তি কোম্পানি ও ডিভাইস নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের দেশেও সাম্প্রতিক সময়ে চুরি, ছিনতাই এমনকি ডাকাতির মতো ঘটনাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীতে এগুলো প্রতিদিনকার ঘটনা। তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদরা জানিয়েছেন, আপনার স্মার্টফোন চুরি বা হারানোর আগে যে পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন :
প্রাথমিক সুরক্ষা-
ফোন লক করুন : প্রাথমিক সুরক্ষা হিসেবে- ফোন আনলক করতে পাসওয়ার্ড বা বায়োমেট্রিক স্ক্যানের ব্যবস্থা নিন। আপনি চাইলে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ যেমন : ব্যাংকিং অ্যাপ, হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যাল অ্যাপেও আলাদা পাসওয়ার্ড সেট করে রাখতে পারেন।
ফাইন্ড মাই ডিভাইস চালু রাখুন : আপনার ফোনে Find My Device অপশনটি চালু করুন। যা আইওএস (iOS) এবং অ্যান্ড্রয়েড (Android) উভয়ের জন্য কার্যকর। এটি উপলব্ধ। তা ছাড়া স্যামসাং ফোনে আলাদা করে ‘Smart Things Find’ ফিচার আছে।
ডেটা ব্যাকআপ করুন : ছবি, ভিডিও ফাইল, কনট্যাক্ট নাম্বার, ক্যালেন্ডার এবং অন্যান্য ফাইল ব্যাকআপ রাখুন। গুগল এবং অ্যাপল তাদের ক্লাউড সার্ভিস প্রদান করে থাকে, যদিও ফ্রি সংস্করণের স্টোরেজ সীমিত। চাইলে হার্ড ড্রাইভ, মেমোরি কার্ড কিংবা ল্যাপটপেও ব্যাকআপ রাখতে পারেন।
নোটিফিকেশন প্রিভিউ বন্ধ করুন : শহরের নিরাপত্তা বাহিনী (পুলিশ) এবং অনেক ফোন কোম্পানি মেসেজ প্রিভিউ বন্ধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যা চোরদের আপনার অ্যাকাউন্টগুলোয় প্রবেশ করার সময় ফোন লক থাকা অবস্থায় রিসেট বা লগইন কোড দেখতে বাধা দেয়। উদাহরণস্বরূপ- iPhone- এ Settings>Notifications>Show Previews থেকে বন্ধ করা যায়।
সাধারণত নিরাপত্তা বাহিনী (পুলিশ) এবং ফোন কোম্পানি ফোনের মেসেজ প্রিভিউ বন্ধ করার পরামর্শ দেয়, যা চোরদের আপনার অ্যাকাউন্টগুলোয় প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ফোন লক থাকা অবস্থায় রিসেট বা লগইন কোড দেখতে বাধা দেয়। আইফোনে এটি করার জন্য, উদাহরণস্বরূপ-আপনার সেটিংস মেনুর নোটিফিকেশন বিভাগে যান এবং ‘শো প্রিভিসে’ ট্যাপ করুন। আপনি অ্যাপ তালিকা নিচে স্ক্রোল করে ব্যক্তিগত অ্যাপগুলোর জন্য প্রিভিউ বন্ধ করতে পারেন। তবে খবর কিংবা আবহাওয়ার মতো কম ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাপগুলোর জন্য সেগুলো চালু রাখতে পারেন।
নতুন ফিচার চালু করুন-
আইফোন : ‘Stolen Device Protection’ চালু করলে চোরদের পক্ষে ফোন রিসেট করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফেস আইডি বা ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া সেটিংস পরিবর্তন করা যাবে না।
অ্যান্ড্রয়েড : আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহার করে বোঝা যায় ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না, তখনই ফোন স্ক্রিন লক হয়ে যায়। ‘Private Spaces’ ফিচার ব্যবহার করে সংবেদনশীল ফাইলগুলো লুকানো যায়।
ডিভাইস নম্বর লিখে রাখুন : ফোনের সিরিয়াল নম্বর বা IMEI নম্বর লিখে রাখুন। এটি ফোন উদ্ধারের সময় কাজে লাগবে। তা ছাড়া নম্বর পেতে ডায়াল করুন : *#06# । অথবা ফোনের বক্সেও এই নম্বরটি লেখা থাকে।
যদি দুর্ভাগ্যক্রমে ফোন চুরি হয়ে যায়, তাহলে পুলিশকে জানান। আপনার ডিভাইসের কোনো বিমা পলিসি থাকলে বিমা কোম্পানিকে কল করুন। এ ছাড়া ফোন কোম্পানিকে জানান যেন তারা নম্বরটি ফ্রিজ করতে পারে এবং একটি প্রতিস্থাপন সিম কার্ড বা ই-সিম ইস্যু করতে পারে। আপনার ব্যাংককে জানান যেন তারা সন্দেহজনক লেনদেনে নজর রাখতে পারে।
‘ফাইন্ড মাই ডিভাইস’ ফিচার ব্যবহার করে আপনার ফোন খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য, একটি ওয়েব ব্রাউজার থেকে iCloud.com/find-এ যান, তবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের www.google.com/android/find -এ যেতে হবে। তা ছাড়া আজকাল স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোনের জন্য নিজস্ব পরিষেবাও রয়েছে। এই সেবাগুলো ম্যাপে ফোনের শেষ অবস্থান দেখায়। আইফোন বন্ধ থাকলেও আশপাশের অ্যাপল ডিভাইসের মাধ্যমে লোকেশন পাঠাতে পারে। তা ছাড়া গুগল পিক্সেল ফোনও কিছু সময় বন্ধ অবস্থায় ট্র্যাক করা যায়।
আপনি ফোনে রিং করতে পারেন, এমনকি যদি এটি সাইলেন্ট মোডেও থাকে। তাতেও সাড়া না পেলে আপনার ফোন থেকে অ্যাক্সেসযোগ্য সব অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট করুন। শেষ অবলম্বন হিসেবে, দূরবর্তীভাবে ফোনটি (রিসেট) মুছে ফেলতে পারেন যেন কোনো তথ্য ভুল হাতে পড়ার কোনো সুযোগ না থাকে।
তথ্যসূত্র : এসোসিয়েড প্রেস (এপি)