মুশফিকুর রহিম; বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি কবিতা, একটি গল্প, একটি উপন্যাসের নাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। একটি ইতিহাসের অধ্যায়। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুশফিক তার ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্ট খেলতে নেমে লিখেছেন একটি ইতিহাস, একটি কবিতা, একটি গল্প ও একটি উপন্যাস। যে গল্পের পটভূমি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট। নায়ক মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলতে নেমে মিরপুরে প্রথম দিনটি নিজের করে নিয়েছেন। রাঙিয়েছেন ৯৯ রানের ইনিংস খেলে। এক রান করলেই আজ ১১ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করবেন। বিশ্বের ৮৪ ক্রিকেটার ক্যারিয়ারে ১০০ বা তার ওপরে টেস্ট খেলেছেন। শচীন টেন্ডুলকার একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ টেস্ট খেলেছেন। শততম টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে কলিন কাউড্রে, জাভেদ মিয়াদাদ, গর্ডন গ্রিনিজ, ইনজামাম-উল হক, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, রিকি পন্টিং, গ্রায়েম স্মিথ, হাশিম আমলা, জো রুট ও ডেভিড ওয়ার্নার সেঞ্চুরি করেন। মুশফিক ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে শততম টেস্টের সেঞ্চুরি হাঁকানো ক্লাবের সদস্য হওয়ার অপেক্ষায়। আজ এক রান করতে পারবেন কি না, সে ভাবনায় বুঁদ হয়ে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিকের সঙ্গে ১০৭ রানের জুটি গড়া মুমিনুল হক অবশ্য চিন্তিত নন, ‘এক সময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি করে ফেলবেন মুশফিক ভাই। আয়ারল্যান্ড দেরি করায় সেটা হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিন্তিত নই সেঞ্চুরির বিষয়ে। যিনি ২০০ রান করেন, সেখানে ১০০ রান করা নিয়ে প্যানিক হবেন কেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি প্যানিক হন না।’ মুশফিকের সেঞ্চুরির অপেক্ষায় শেষ প্রথম দিন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯২ রান।
সিলেটে ইনিংস ও ৪৭ রানে জয়ী হয়ে সিরিজে এগিয়ে রয়েছে নাজমুল বাহিনী। মিরপুরে জিতলে হোয়াইটওয়াশ করবে আইরিশদের। মুশফিকের শততম টেস্টকে রাঙাতে একাদশে দুটি পরিবর্তন করেন টিম ম্যানেজমেন্ট। দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদের বদলে সুযোগ পান এবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে ২৫ বছর হয়ে গেছে। ২৬ বছরে পা দিয়েছে চলতি নভেম্বরে। নতুন বছরে দ্বিতীয় টেস্ট খেলছে মিরপুরে। গতকাল মুশফিকের শততম টেস্টে টস জেতেন অধিনায়ক নাজমুল। টেস্টের শেষের দিকে বল ঘুরবে বলে আগে ব্যাটিং করেন। দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয় ৫২ রানের জুটি গড়েন। প্রথম টেস্টে ১৬৯ রানের ইনিংস খেলা জয় আউট হন ৩৪-এ। সাদমান আউট হন ৩৫ রানে। প্রথম টেস্টে ১০০ রানের ইনিংস খেলা টাইগার অধিনায়ক নাজমুল আউট হন ব্যক্তিগত ৮ রানে। ৯৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন মুমিনুল ও বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিক। দুজনে ৩৫.৪ ওভারে যোগ করেন ১০৭ রান। মুমিনুল ৬৩ রানের ইনিংস খেলে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের চতুর্থ শিকার হন। টাইগার ইনিংসের ৪ উইকেটই নেন ম্যাকব্রাইন। মুমিনুলের ১২৮ বলের ইনিংসটিতে ছিল মাত্র ১টি চার। সাবেক অধিনায়ক সাজঘরে ফেরেন দলীয় ২০২ রানে। এরপর মুশফিক জুটি গড়েন টি-২০ অধিনায়ক লিটনের সঙ্গে। দুজনে পঞ্চম উইকেটে ৯০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন পার করেন। মুশফিক ৯৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৮৭ বলে ৫ চারে সাজিয়ে। প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন ৯৩ বলে এক চারে। পরের ৪৯ রান করেন ৯৭ বলে ৪ চারে। লিটন ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ৮৬ বলে ২ চারে। মিরপুর টেস্টে প্রথম দিনে টাইগারদের ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি মারেন অধিনায়ক নাজমুল। ব্যাটাররা চার মারেন ১৬টি।
২০০৫ সালে মুশফিকের টেস্ট অভিষেক। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টটি বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ব্যবধানে। মুশফিক অভিষেক ইনিংসে করেছিলেন ১৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ রান। ২০১৬ সালে মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট খেলেন। টেস্টটিতে অভিষেক হয়েছিল মেহেদি হাসান মিরাজের। টেস্টটি বাংলাদেশ জিতেছিল। গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ ১৫৬তম টেস্ট খেলছে। মুশফিক তার ২০ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে ১০০তম টেস্ট খেলছেন।
দিনে সাধারণ ৯০ ওভার খেলা হয়। এর ব্যত্যয় হয়নি গতকাল। পুরো ৯০ ওভার খেলা হয়েছে। তারপরও মুশফিকের সেঞ্চুরির জন্য আরও এক ওভার বেশি খেলতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আয়ারল্যান্ড খেলতে রাজি হননি। মুমিনুল এক ওভার বেশি খেলার আগ্রহের কথা স্বীকার করেন, ‘এ সময়ে তো সবাই চাইবে। কারণ দুজনেরই মাইলস্টোনের বিষয়। অবশ্য যে কেউ চাইবে মাইলস্টোন করার জন্য। ওরা অবশ্যই স্লো করেছে। সবাই চেয়েছিল। কিন্তু আয়ারল্যান্ড রাজি হয়নি।’ সফরকারী অধিনায়ক রাজি হননি বলে সেঞ্চুরি করা হয়নি মুশফিকের। অপরাজিত থাকেন ৯৯ রানে।