উত্তেজনায় কাঁপছে দেশ। কী ঘটবে ঢাকায় কাল? ফুটবলে মর্যাদার লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতবে, নাকি ভারত। আবার পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দুই দেশ মাঠ ছাড়বে কি? আগামীকাল ঢাকা স্টেডিয়ামে বহু প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ। এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ফিরতি ম্যাচ এটি। এর আগে মার্চে শিলংয়ে অনুষ্ঠিত দুই দেশের প্রথম ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। ২০০৩ সালের পর ভারত জাতীয় ফুটবল দল ঢাকায় এলো। ২০০৯ সালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এসএ গেমসেও ভারত খেলেছিল। তবে সেটি ছিল বয়সভিত্তিক দল। ক্রিকেটের মতোই ফুটবলেও দুই দেশের লড়াইয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আশির দশকের শুরু থেকেই ফুটবলে লড়াইটি মর্যদার রূপ নিয়েছে। তা ছাড়া এবার বাংলাদেশ ঘরের মাঠে ভারতের মুখোমুখি হবে। গ্যালারি কেমন কেঁপে উঠবে তা কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সব টিকিট বিক্রি হওয়াতেই প্রমাণ মেলে।
মর্যাদার লড়াই হলেও অধিকাংশ ম্যাচেই ভারত জয় লাভ করেছে। ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে বাংলাদেশ জাতীয় দল জেতার পর আর জিততে পারেনি। এরপর থেকেই হারের বৃত্তে বন্দি। ১৯৯৯ সালে শেষবারের মতো নির্ধারিত সময়ে ভারতকে হারিয়ে ছিল বাংলাদেশ। সেবার কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে শাহজাদা টিপুর অসাধারণ গোলে জিতে বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠে। তার পর ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার সোনা জেতে বাংলাদেশ। আগামীকালের ম্যাচে তো অতিরিক্ত সময় ও টাইব্রেকার হবে না। নির্ধারিত সময় জয় না হলে ম্যাচ ড্র হবে। ২৬ বছর পর নির্ধারিত সময়ে ভারতকে হারানো যাবে কি? অতীতে যাই ঘটুক বাংলাদেশ এখন ব্যালেন্সড দল। হামজা দেওয়ান চৌধুরী, সামিত সোম ও জায়ানরা খেলায় দৃশ্য বদলে গেছে। এমন শক্তিশালী দল হয়ে কি জামাল, হামজারা দেশকে বিজয় এনে দিতে পারবেন না? এনিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ
এনিয়ে কী ভাবছেন?
সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ গোলাম সারোয়ার টিপু বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি বড় ম্যাচ। দুই দেশের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিকতা হলেও বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের গুরুত্বই আলাদা। জয়ের দিক দিয়ে ভারত অনেক এগিয়ে। পরিসংখ্যানেই তাই বলে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় ভারত এ পর্যন্ত যে কটি ম্যাচ জিতেছে সেখানে ব্যবধান ২-১, ২-০ বা ১-০ হবে। একবার সম্ভবত ভারত ৩-০ গোলে জিতেছিল। আবার বাংলাদেশ যে কটি জিতেছে গোলের মার্জিন একই। আমি বোঝাতে চাচ্ছি মানের দিক দিয়ে ভারত আমাদের চেয়ে খুব এগিয়ে নেই। তার পরও হেরেই চলেছি কেন? ভারত ঘিরে খেলোয়াড়দের ভিতর আলাদা চাপ থাকে। তাই সবকিছু এলোমেলো করে হেরে বসে। এবার ঘরের মাঠে খেলা, তার পর আবার হামজা, সামিত ও সর্বশেষ জায়ান ছেলেটা যোগ দেওয়ার পর দলের শক্তি বেড়েছে। এখন দরকার টেকনিক্যাল ও পরিকল্পনা করে খেলা। মনে রাখতে হবে, হামজার মতো খেলোয়াড় না থাকার পরও টেকনিকের দিক দিয়ে ভারত এগিয়ে। পরনির্ভরতা কাটিয়ে সবাই সেরাটা খেলতে পারলে জয় সম্ভব। আর এগিয়ে থাকলে শেষ ১০ মিনিট কৌশলী হতে হবে। দেখা যাক কী করে আমাদের বাংলাদেশ।’
১৯৮৫ সালে ঢাকায় সাফ গেমসে ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে গেলেও শেখ মো. আসলামের দর্শনীয় গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছিল। সেই আসলাম বলেন, ‘এবার আমরা জিতব আশা করি। তবে মনে রাখতে হবে ফুটবল ১১ জনের খেলা। এখানে সবারই দায়িত্ব সমান। হামজা, সামিত বা জায়ান সবকিছু করে দেবে তা ভাবলে ভুল হবে। স্ট্রাইকার গোল পাচ্ছে না এটা চিন্তার বিষয়। এমন তো না যে, হামজা প্রতি ম্যাচে গোল পাবে। আমি বলব ভুলে ভরা বাংলাদেশ। বেস্ট ইলেভেন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একেবারে শেষের দিকে এসে জয় হাত ছাড়া করছে। আমি মনে করি ভারতের বিপক্ষে জামালকে শুরু থেকে খেলানো উচিত। যোগ্যদেরই সেরা একাদশে রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে প্রতিপক্ষটা ভারত। এখানে ভুল হলেই সব শেষ।’
১৯৯৯ সালে নেপাল সাফ গেমসে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই দলে গোলরক্ষক ছিলেন বিপ্লব ভট্টাচার্য। ১৮ নভেম্বরের ম্যাচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের চাপমুক্ত খেলতে হবে। কেন বলছি, জানেন আমি তো ভারতের বিপক্ষে বেশ কটি ম্যাচে খেলেছি। অস্বীকার করব না নিজেও চাপে ছিলাম। একটা ভালো দিক হচ্ছে হামজা, সামিত চাপমুক্ত থাকবে। ওরা সেরাটা দিতে পারবে আশা করি। কিন্তু পুরো দলকে সেরাটা দিতে হবে, তা না হলে জেতাটা কঠিন। বেস্ট ইলেভেন সিলেকশনটা করতে হবে বুঝেশুনে। এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকি শেষ কয়েক মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকটি খেলায় আমরা শেষের দিকে গোল খেয়েছি। এ ক্ষেত্রে গোলরক্ষক মিতুনের যেমন ভুল ছিল। তেমনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন ডিফেন্ডাররা। বিষয়টি কোচকে ভাবতে হবে।’