হামজা, সামিত ও ফাহামিদুলদের নিয়ে দল গড়েও এশিয়ান কাপে ঝুলে আছে পুরুষ দলের ভাগ্য। দুই ম্যাচে মূল্যবান ৫ পয়েন্ট হারানোয় ৪৫ বছর পর চূড়ান্ত পর্বে খেলতে পারবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। তবে নারী ফুটবল দলের চিত্রটা পুরোপুরি উল্টো। টানা দুই ম্যাচে জয় পেয়ে নারী জাতীয় দলের এশিয়ান কাপে মূল পর্বে খেলাটা সময়ের ব্যাপারই বলা যায়। বড় কোনো অঘটন না ঘটলে হামজাদের আগেই এশিয়ান কাপ মূল পর্বে খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে আফঈদাদের। গতকাল ইয়াঙ্গুনে অনুষ্ঠিত গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস লিখতে চলেছে নারী জাতীয় দল।
মিয়ানমার ঘিরে নারী দলের বড় একটা আফসোস ছিল। ২০২২ সালে প্রথম সাফ জেতার পর অলিম্পিক বাছাই পর্ব খেলতে মিয়ানমারে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল সাবিনাদের। কিন্তু কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্ব দেওয়া কমিটি অর্থসংকট দেখিয়ে নারী দলের স্বপ্ন-আশা ভেঙে দেয়। মিয়ানমার যাওয়া হয়নি আর তাদের। এ নিয়ে তখন দেশে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। সেই মিয়ানমারেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে মূলত মিয়ানমারকে হারিয়েই। ভাবা যায়, বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়ান কাপে চূড়ান্ত পর্ব খেলতে যাচ্ছেন। ক্রিকেটে মেয়েরা এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ফুটবলে এবার এশিয়ান কাপ খেলবেন। ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের জয়জয়কার। নারী দলের মিয়ানমার জয় করাটা নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। ফিফা র্যাংকিংয়ে (১২৮-৫৫) ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারকে পরাজিত করেছে নারী জাতীয় দল। শক্তির দিক দিয়েও এগিয়ে ছিলেন স্বাগতিকরা। হয়তো কারও কারও ধারণা ছিল মিয়ানমারের সামনে দাঁড়াতে পারবে না বাংলাদেশ। সব ভয় জয় করেছেন মেয়েরা।
দুর্দান্ত খেলে জয় পেয়েছেন আফঈদা, ঋতুপর্ণা ও তহুরারা। হারলেও স্বাগতিকরা সমানতালে লড়েছেন। গোলের বেশ কয়েকটি সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষক রূপনা চাকমার দৃঢ়তায় মিয়ানমারকে মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হয়। জোড়া গোল করেই ম্যাচসেরা হয়েছেন ঋতুপর্ণা। গতকাল পুরো দলই অসাধারণ খেলেছে। এমন ঐতিহাসিক জয়ের পরও মূল পর্ব এখনো নিশ্চিত হয়নি বাংলাদেশের। ৫ জুলাই তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে ড্র করলেই চলবে। তুর্কমেনিস্তান কেমন মানের দল তা আফঈদাদের ভালো জানা। তবে প্রতিপক্ষকে গুরুত্ব দিয়েই বাংলাদেশ মাঠে নামবে। স্বপ্নের এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেবে হ্যাটট্রিক জয় দিয়ে।
পচা শামুকে পা কাটলে তখন আবার মিয়ানমারের বন্ধ দুয়ার খুলে যেতে পারে। তীরে এসে তরি ডুবলে এ দুঃখ সামাল দেওয়া কষ্টকর হবে। এখন প্রত্যাশা একটাই-জয় দিয়ে মেয়েরা নতুন ইতিহাস লিখবেন।
১৯৮০ সাল, অর্থাৎ ৪৫ বছর আগে পুরুষ জাতীয় দল এশিয়ান কাপে মূল পর্বে খেলেছিল। এটা হয়তো অনেকেই ভুলতে বসেছেন। মেয়েরা হামজাদের আগেই মূল পর্বের টিকিট পেতে যাচ্ছেন। এর চেয়ে বড় গর্ব আর কী হতে পারে!