কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে (এসসিজি) বাংলাদেশের উল্লেখ করার মতো একমাত্র রেকর্ডস মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরি! ২০০১ সালে এ মাঠে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড গড়েছিলেন আশরাফুল। দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এ ছাড়া উল্লেখ করার মতো আর কোনো রেকর্ডস নেই। এসসিজিতে টাইগাররা নিজেদের চতুর্থ টেস্ট খেলছে এবার। আগের তিন টেস্টে একপেশে লড়াইয়ে হার শতভাগ। দুটি হার আবার ইনিংস ব্যবধানে। তৃতীয় দিন শেষে চলমান টেস্টের যে চিত্র, তাতে আরেক ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ। হারের শঙ্কায় পড়ার কারণ, ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিং। ব্যাটারদের দায়িত্বহীনতার মাঝে আলো ছড়িয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৫৫ টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৭ বার ৫ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছেন বাঁ হাতি এ স্পিনার। দেশের বাইরে পঞ্চমবার ‘ফাইফার’ বা ৫ উইকেট নিয়ে স্পর্শ করেন দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে।
এসসিজিতে প্রয়োজনীয় সময়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি কেউ। দায়িত্বশীল হতে যে পরিকল্পনা, দৃঢ়তা, মানসিকতা লাগে, তার ছিটেফোঁটাও দেখা মেলেনি এসসিজিতে টাইগার ব্যাটারদের। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, এনামুল হক বিজয়, সাদমান ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে ফের ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়েছে টাইগাররা। হাতে মাত্র ৪ উইকেট নিয়ে আজ চতুর্থ দিন খেলতে নামবে। একমাত্র স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে রয়েছেন লিটন দাস। বাকি সবাই টেল এন্ডার। এদের নিয়ে ইনিংস হার এড়াতে ৯৬ রান করতে পারবে নাজমুল বাহিনী?
২১১ রানে পিছিয়ে শ্রীলঙ্কার দুই স্পিনার প্রভাত জয়সুরিয়া ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ঘূর্ণিতে বেসামাল হয়ে পড়ে নাজমুল বাহিনী। ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারাতে থাকে। ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিং এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে, ৩০ রানের বেশি কোনো জুটিই হয়নি। প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের জুটি ছিল। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসে এখনো দেখা মেলেনি হাফ সেঞ্চুরি। প্রথম ইনিংসে ৭ ব্যাটার ২০ ঊর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছিলেন ওপেনার সাদমান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১১৫ রানের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ মুশফিকের। বিশেষ করে পুরো সিরিজেই ব্যর্থ ওপেনার এনামুল হক বিজয়। গল টেস্টের উভয় ইনিংসে তার স্কোর ছিল যথাক্রমে ০ ও ৪। কলম্বোয় সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে প্রথম ইনিংসে শূন্য করেন। টেস্ট ক্যারিয়ার বাঁচাতে দ্বিতীয় ইনিংসটি ছিল তার ‘লাইফলাইন’। কিন্তু এবারও ব্যর্থ। ১৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করে নির্বাচকদের বাধ্য করেছিলেন দলে ফেরাতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ কোনোভাবেই নিতে পারেননি। টাইগারদের কোনো ব্যাটার হঠাৎ স্পিন ধরা উইকেটে ফরোয়ার্ড খেলতে যেয়ে আউট হননি। সবাই পেছনে পায়ে খেলে বোল্ড কিংবা কাচ অথবা লেগ বিফোর হয়েছেন। ৯৮ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ মুশফিক যেভাবে জয়সুরিয়ার টার্নে বোল্ড হয়েছেন, তার টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। অধিনায়ক নাজমুল ও সহ অধিনায়ক মিরাজ পেছনের পায়ে খেলে লেগ বিফোর হন। নাজমুল ১৯, মুমিনুল ১৫, সাদমান ১২, মিরাজ ১১ রান করেন। লিটন ব্যাট করছেন ১৩ রানে।
গলের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের সহযোগিতা পুরোপুরি নিতে পারেননি তাইজুল। দেশের একমাত্র টেস্ট স্পেশালিস্ট স্পিনার তাইজুল গলে উইকেট নিয়েছিলেন ৪টি। অফ স্পিনার নাঈম হাসান উইকেট নিয়েছিলেন ৬টি। তবে কলম্বোয় সব বোলারকে ছাড়িয়ে যান তাইজুল। ক্যারিয়ারের ১৭ বারের মতো ৫ উইকেট নেন। তার বোলিং স্পেল ৪২.৫-৪-১৩১-৫। নাঈমও উইকেট নেন ৩টি। তার স্পেল ১৮-৪-৮৭-৩।
জ্বরের জন্য গলে খেলতে না পারলেও কলম্বোয় ফেরেন টেস্ট সহ অধিনায়ক মিরাজ। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়ে ছিলেন ব্যর্থ। উইকেট পাননি স্বাগতিক ইনিংসে। তার স্পেল ২০-১-৭৫-০। মিরাজের মতো ব্যর্থ ছিলেন দুই বছর টেস্ট খেলতে নামা ইবাদত হোসেনও। ধারহীন বোলিং করেন ডানহাতি পেসার। তার স্পেল ছিল ১৪-০-৫৫-০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ২৪৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস, ১১৫/৬, ৩৮.৪ ওভার (সাদমান ১২, এনামুল ১৯, মুমিনুল ১৫, এনামুল ১৯, মুশফিক ২৬, লিটন ১৩*, মিরাজ ১১; আসিথা ৮-১-২২-১, ভিশ্ব ৬-৩-১৬-০, জয়াসুরিয়া ১৪-২-৪৬-২, ধনাঞ্জয়া ৪-১-১৩-২, দিনুশা ৩-১-৭-০, থারিন্ডু ২.৪-০-১০-১)।
শ্রীলঙ্কা : প্রথম ইনিংস, ৪৫৮