২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের অনেক পরিচালকই সরে যান। ২৩ আগস্ট দায়িত্ব নেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। এরপর সরকার ফারুককে পরিবর্তন করে নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। অথচ পুরোপুরি জমে উঠেছে বিসিবির নির্বাচন। বাংলাদেশ এখন নির্বাচনমুখী। নির্বাচনি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে দেশ। এই নির্বাচনি হাওয়ায় উড়ছেন বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিসিবিতে নির্বাচন করবেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন বুলবুল। সিলেট জেলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনকালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান বুলবুল আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেবেন। কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবাল জানিয়েছিলেন, তিনি বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেবেন। সিলেটে মিডিয়ার কর্মীরা বুলবুলের কাছে জানতে চান, তিনি পুনরায় সভাপতি থাকতে চাইছেন কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিসিবির বর্তমান সভাপতি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আমরা (বিসিবির) নির্বাচন করব এবং প্রপার নির্বাচনই করব। এখানে (বিসিবিতে) সভাপতি পদে নির্বাচন হয় না। পরিচালকদের নির্বাচন হয়। সেটা প্রথম লক্ষ্য এবং সেখানে থাকার চেষ্টা করব। পরবর্তীতে যদি সুযোগ হয়, আমি চেষ্টা করব যেভাবে হোক বাংলাদেশকে সার্ভ করার জন্য।’ তাহলে বিসিবি সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বাংলাদেশের দুই সাবেক অধিনায়ক বুলবুল ও তামিম। হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আরও কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে ক্রিকেটপাড়ায়।
বিসিবির নির্বাচন হবে ২০২৪ সালের সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। ক্যাটাগরি-১, ক্যাটাগারি-২ ও ক্যাটগরি-৩-এর প্রতিনিধিরা সরাসরি ভোটে ২৩ পরিচালক নির্বাচিত করবেন। ক্যাটাগরি-১-এর জেলা ও বিভাগের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত করবেন ১০ পরিচালক। ক্যাটাগরি-২-এর ৭৬ ক্লাব প্রতিনিধিরা নির্বাচিত করবেন ১২ পরিচালক এবং ক্যাটাগরি-৩ থেকে নির্বাচিত হবেন এক পরিচালক। পরিচালনা পর্ষদের বাকি দুই পরিচালক আসবেন সরাসরি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কোটায়। এই ২৫ পরিচালক নির্বাচিত করবেন বিসিবির সভাপতি।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় বিসিবি পরিচালক হয়েছেন। বুলবুল সভাপতি হয়েছেন এরপর। আগামী নির্বাচনে এনএসসি কোটায় নির্বাচন করবেন বুলবুল। সভাপতি পদে নির্বাচন করার আগে বুলবুলকে কাউন্সিলর হতে হবে। এরপর পরিচালক পদে নির্বাচিত হতে হবে। সর্বশেষ বিসিবি সভাপতি পদে নির্বাচন করতে হবে। এনএসসি কোটায় যদি পরিচালক হয়েই বুলবুলকে বোর্ড সভাপতি পদে সরাসরি নির্বাচন করতে দেখা যাবে। তিন মাস আগে বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর মিডিয়াকে বুলবুল বলেছিলেন, তিনি একটা কুইক টি-২০ ইনিংস খেলতে চান। শুধু তাই নয়, বোর্ডে লম্বা সময় থাকার কোনো আগ্রহ নেই তার। অথচ গতকাল নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর স্পষ্ট হয়েছে তিনি টেস্ট খেলার মানসিকতা নিয়েই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। শুধু শুধু লোক দেখাতে জানিয়েছিলেন, একটা কুইক টি-২০ ইনিংস খেলতে চান। অবশ্য দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পর থেকেই ক্রিকেটপাড়ায় ভেসে বেড়াচ্ছিল বুলবুল নির্বাচন করবেন এবং এনএসসির কোটায় পরিচালক হবে।
সোমবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ২১তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের। গত সভায় বিসিবি নির্বাচনের তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা ছিল। নির্বাচন কমিটি গঠনের বিষয়টি বিসিবি সভাপতি বুলবুল নিজ দায়িত্বে নেন। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করবেন বিসিবি সভাপতি। নির্বাচন কমিশন বিসিবির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। ক্রিকেটপাড়ায় গুঞ্জন ৪-৬ অক্টোবরের যে কোনো একদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আশ্চর্য হলেও সত্যি, বিসিবির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসাবে তিনজন বিভিন্ন মেয়াদে সভাপতিত্ব করেছেন। ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর নির্বাচন হয়েছিল বর্তমান কমিটির এবং দায়িত্ব গ্রহণ করে ৭ অক্টোবর। বর্তমান কমিটির প্রথম সভাপতি ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের অনেক পরিচালকই সরে যান। ২৩ আগস্ট দায়িত্ব নেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। এরপর সরকার ফারুককে পরিবর্তন করে নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। বিসিবির ক্রিকেট ইতিহাসে ফারুক ও বুলবুল সাবেক ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক হিসেবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।