মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই রাশিয়ার কাছে থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। এর শাস্তি হিসেবে এরই মধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর জরিমানা-সহ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের পরেও ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি ভারত। অদূর ভবিষ্যতে তার কোনও সম্ভাবনাও নেই বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল।
কারণ, তথ্য-পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, গত সাড়ে তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি করায় বিপুল আর্থিক সাশ্রয় হয়েছে ভারতের। সরকারি তথ্য উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ৩৯ মাসে রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল আমদানি করে অন্তত ১২৬০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে ভারত।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে।
যদিও তাতে গুরুত্ব না দিয়ে গত সাড়ে তিন বছর ধরে নয়াদিল্লি-মস্কো বাণিজ্যিক লেনদেন চলছে সমানতালে। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সার্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে পৌঁছেছে ৬৮০০ কোটি ডলারে। তার মধ্যে ভারত থেকে রাশিয়ায় রফতানি করা হয়েছে ৪৯০ কোটি ডলারের পণ্য। আর রাশিয়া থেকে ভারত আমদানি করেছে ৬৩০০ কোটি ডলারের, যার বড় অংশই সামরিক সরঞ্জাম এবং অপরিশোধিত তেল। বস্তুত ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর অনেক আগে থেকেই রুশ অপরিশোধিত তেলের ক্রেতা ভারত। তবে আগে রাশিয়া থেকে তারা কম তেল আমদানি করত। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পরে আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। তেল আমদানিকারী দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। এই মোট আমদানির ৩৫ শতাংশই এখন আসে রাশিয়া থেকে।
আগে খনিজ তেলের জন্য ভারত মূলত নির্ভর করে থাকত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিররাতের মতো পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর ওপর।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করে রাশিয়ার ওপর। তাই বিক্রি বাড়াতে রাশিয়া সস্তায় এবং অধিক ছাড়ে তেল বিক্রি শুরু করে। ভারত তখন থেকেই রাশিয়ার তেল আমদানি বাড়িয়ে দেয়। এক ধাক্কায় ২ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে পৌঁছে যায় ভারতের আমদানির পরিমাণ। এতে নয়াদিল্লির অনেক সাশ্রয় হয়। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এই পদক্ষেপকে ভাল চোখে দেখেনি।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত ১৬২২ কোটি ডলারের তেল আমদানি করেছিল। রাশিয়ার তেল না কিনে অন্য দেশ থেকে কিনলে এই খরচ আরও ৪৮৭ কোটি ডলার বেশি পড়ত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাশিয়ার তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও আমদানি বাড়ায় সাশ্রয় হয় ৫৪১ কোটি ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছাড় নেমে আসে মাত্র ২.৮ শতাংশে। এতে সাশ্রয় হয় মাত্র ১৪৫ কোটি ডলার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের শেশে ছাড় কিছুটা বাড়ার ফলে প্রায় ৮৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষপর্বে রুশ তেল আমদানি কিছুটা কমলেও আগস্ট থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে আবার। তবে ব্রোকারেজ সংস্থা সিএলএসএ’র গত মাসের রিপোর্ট বলছে, রুশ তেলে বর্তমান ছাড় নয়াদিল্লির কাছে ততটা লাভজনক নয়। এমনকি, রাশিয়ান তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ৬০ ডলারে নেমে গেলেও, বিমা থেকে শুরু করে শিপিং এবং রিস্ক প্রিমিয়ামের মতো একাধিক খরচের কারণে, ভারত কম সুবিধা পায়। ২০২৩-২৪ সালে গড় ছাড় ছিল প্রতি ব্যারেল প্রায় ৮.৫ ডলার, যা এখন কমে প্রতি ব্যারেলে মাত্র ৩ ডলারে এসেছে। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ওয়েল প্রাইস
বিডি প্রতিদিন/একেএ