টিম ম্যানেজেমেন্টর শুরুর পরিকল্পনায় ছিলেন না নাঈম হাসান। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে খেলার কথা ছিল অফ স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের। জ্বরে আক্রান্ত মিরাজ খেলার মতো সুস্থ না হওয়ায় খেলেননি। নাজমুল-সিমন্স থিঙ্ক ট্যাংক অনেকটা বাধ্য হয়ে একাদশে নেন নাঈমকে। খেলতে নেমেই গলের নিষ্প্রাণ উইকেটে প্রাণের সঞ্চার করেন নাঈম। তুলে নেন প্রথমবারের মতো ‘ফাইফার’ বা ৫ উইকেট। যা দেশের বাইরে প্রথম, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় এবং ক্যারিয়ারে চতুর্থ। গতকাল চতুর্থ দিন শেষে তার ঘূর্ণিতে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় বাংলাদেশের চেয়ে ১০ রানে পিছিয়ে ৪৮৫ রানে। নাঈমের স্পেল ৪৩.২-৪-১২১-৫। তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ১০৫ রানে ৬ উইকেট। নাঈমের বোলিংয়ের দিনে টেস্টে বাংলাদেশ এগিয়ে ১৮৭ রানে। ৩ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে আজ পঞ্চম দিন ব্যাট করতে নামবেন টাইগার দুই অপরাজিত ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। চতুর্থ দিন শেষে চিত্র দেখে সাদা চোখে যে কেউ বলবেন ড্র-ই শেষ ফল। কিন্তু অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট বলে অনেকে রোমাঞ্চ খুঁজছেন পঞ্চম দিনে। নাঈমও বিশ্বাস করেন টেস্টে ফল আসতে পারে, ‘ম্যাচে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে। যদিও উইকেট টেস্ট সহায়ক। ভালো কিছু করতে হলে পঞ্চম দিন আমাদের সেরাটা খেলতে হবে। উইকেটে ক্র্যাক হচ্ছে। আমরা ওদের একটা ভালো টার্গেট দিতে চাই।’
তৃতীয় দিন স্বাগতিকরা শেষ করেছিল ৪ উইকেটে ৩৬৮ রান নিয়ে। ১২৭ রানে পিছিয়ে গতকাল ব্যাটিং করে আরও ১১৭ রান যোগ করে স্বাগতিকরা। আগের দিন ১ উইকেট নেওয়া নাঈম গতকাল আরও ৪ উইকেট নেন। বলের বৈচিত্র্যে তিনি একে একে সাজঘরে ফেরান স্বাগতিক অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, কামিন্দো মেন্ডিস, থারিন্দু রত্মানায়েক ও আসিথ মিলিন্দাকে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দারুণ উইকেট কিপিংও করেন লিটন দাস। স্বাগতিকদের ইনিংসে ক্যাচ নেন ৪টি। ২টি ছিল নাঈমের বলে। স্বাগতিকদের ৪৮৫ রানে গুটিয়ে ১০ রানে এগিয়ে যায় টাইগাররা। দেশের বাইরে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যাওয়ার ঘটনা অষ্টমবার। আগের সাতবার এগিয়ে যাওয়ায় ৩টি করে টেস্ট জিতেছিল ও হেরেছিল বাংলাদেশ। ড্র একটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একবার এগিয়ে যায়। এখন কথা হচ্ছে, আজ পঞ্চম দিন কি রোমাঞ্চ ছড়াবে দুর্গনগরীর উইকেটে।
টাইগার দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ রানে বিচ্ছিন্ন হন। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ বিজয়। প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খুলতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে সাজঘরে ফেরেন ৪ রানে। বিজয়ের বিদায়ের পর খুব বেশি সময় টিকে থাকেননি সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক। ব্যক্তিগত ১৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। ৬০ রানে ২ উইকেটের পতনের পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাদমান ও অধিনায়ক নাজমুল যোগ করেন ৬৮ রান। দুজনই হাফ সেঞ্চুরি করেন। সাদমান ৭৬ রানের ইনিংস খেলে মিলিন্দ রত্নানায়েকের বলে লেগ বিফোর হন। ১২৬ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৭টি চার। ১২৮ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনের পর ৪৯ রানে দিন পার করেন নাজমুল-মুশফিক জুটি।
দেশের বাইরে নাঈমের প্রথমবার ৫ উইকেট নেন। গলে এই প্রথম। তবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুলের। ২০২১ সালে তাইজুলের বোলিং স্পেল ছিল ১৯.২-২-৭২-৫।
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ৪৯৫/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস, ১৭৭/৩, ৫৭ ওভার (সাদমান ৭৬, এনামুল ৪, মুমিনুল ১৪, শান্ত ৫৬*, মুশফিক ২২*; আসিথা ৮-০-৩১-০, জয়াসুরিয়া ১৭-১-৪৮-১, থারিন্দু ১৪-০-৫১-০, মিলান ৯-৪-১৩-১, ধনাঞ্জয়া ৮-০-২৭-০, কামিন্দু ১-০-২-০)
শ্রীলঙ্কা : প্রথম ইনিংস, ৪৮৫/১০, ১৩১.২ ওভার (কামিন্দু মেন্ডিস ৮৭, মিলান রত্নানায়েক ৩৯, হাসান ২১-৪-৭৪-৩, নাহিদ ১৯-০-৯৭-০, তাইজুল ৪১-৩-১৫৬-১, নাঈম ৪৩.২-৪-১২১-৫, মুমিনুল ৭-০-২৮-১)।