ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরোতে পারছে না দেশের ফুটবল। আন্তর্জাতিক আসরে শুধু হার আর হার। কখনো ভাগ্যক্রমে দু-একটি ম্যাচে ড্র। জাতীয় দলের এ অবস্থায় ফুটবলের প্রতি অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বাঙালির প্রাণের খেলা অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারে হারিয়ে যাবে এ শঙ্কা অনেকেরই ছিল। এমন হতাশার মধ্যে হঠাৎই আশার সঞ্চার হয়েছে। ঝলমলে না হলেও কিছুটা আলো উঁকি দিচ্ছে। ২৫ মার্চ ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো জয় না পেলেও বাংলাদেশ যে খেলাটা খেলেছে তাতেই যত আশা। শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ গোলশূন্য ড্র করেছে। সুযোগ যদি কাজে লাগানো যেত তাহলে অন্তত ২ গোলে জিতে মাঠ ছাড়তে পারত বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে ভারতের স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কুজে বলেছেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে ম্যাচ হারিনি। বাংলাদেশ যে সুযোগ পেয়েছিল তাতে ব্যবধান ০-৩ হতে পারত।’
ফুটবলে অনেক দিন পর ভারতীয় কোচের মুখে অসহায়ত্বের কথা শোনা গেল। তিনি এও বলেছেন, ‘সব তো এক ম্যাচে বদলানো যায় না। আমার মনে হয় সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।’ একজন বিদেশি কোচ প্রতিপক্ষের প্রশংসা কখন করেন, নিশ্চয়ই তার মধ্যে ভালো কিছু দেখতে পেয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ তো এর আগেও ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ড্র করেছে। ২০১৯ সালে কলকাতা সল্টলেক স্টেডিয়ামে জামালদের গতিময় খেলা দেখে চুন্নু, আসলাম ও কায়সারদের মতো সাবেক তারকা ফুটবলাররাও বলেছিলেন, বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্স সত্যিই অবিস্মরণীয়। প্রথম গোল করে এগিয়ে থাকলেও শেষের দিকে গোল হজম করে জেতা ম্যাচ ড্র করেছিল। শিলংয়েও বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। সহজ সহজ সুযোগ হাতছাড়াও করেছে। কিন্তু সল্টলেকের মতো অলটাইম গতিময় খেলা চোখে পড়েনি। সল্টলেকের পারফরম্যান্সই যদি ভারতের বিরুদ্ধে সেরা হয়ে থাকে তাহলে শিলংয়ের ম্যাচ ঘিরে এত আলোচনা কেন? বাংলাদেশ যেমন সুযোগ পেয়েছে তেমন তো ভারতের বেলায়ও ঘটেছে। এখানে আলাদা কি কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে? কায়সার হামিদ এ ব্যাপারে বলেন, ‘এখানে আলাদা বলতে আমি হামজা দেওয়ান চৌধুরীকে বোঝাব। সেদিনই ছিল তার অভিষেক ম্যাচ। সতীর্থদের পারফরম্যান্স ও পজিশন সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। অথচ প্রথম দিনে তিনি যে পারফরম্যান্স দেখালেন তাতে তাকে আমি ম্যাজিকম্যানই বলব। প্রথম ম্যাচে তিনি নিজেকে যেভাবে মানিয়ে নিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ফুটবল তার কতই না চেনা। মাঠে তার কোনো পজিশনই ছিল না। মাঠজুড়ে খেলেছেন। দেশের হয়ে শতভাগ উজাড় করে দিয়েছেন। আমার আরও ভালো লেগেছে সতীর্থরা তার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। তবে ফুটবলে আসল কাজ গোলটা করতে পারেননি। আমি বলব হামজাকে পেয়েই ফুটবলে নতুন বাংলাদেশের দেখা মিলল। মরা নদীতে যেন জোয়ার এলো।’
শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘শিলংয়ে আমরা দুর্ভাগ্যক্রমে ম্যাচ জিততে না পারলেও আমি হতাশ নই, আশাবাদী। অন্ধকারে ডুবে থাকা ফুটবলে আলোর দেখা মিলেছে। সবকিছু কিন্তু হামজাকে ঘিরে। তার পারফরম্যান্স সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করেছে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েতে বাংলাদেশ আরও পাঁচটি ম্যাচ খেলবে। জানি না হামজা সবকটি খেলতে পারবেন কি না; যদি পারেন তাহলে বলব পরবর্তী রাউন্ডে খেলার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। হামজা ম্যাজিকের পরও প্রথম ম্যাচে কিছু ভুল ধরা পড়েছে। তা যদি শুধরিয়ে নামতে পারে তাহলে বাংলাদেশকে ঠেকাবে কে? হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প তো কমবেশি আমাদের সবারই জানা। যেখানে শুধু আতঙ্কই ছিল। আমি বলব ফুটবলে বাংলাদেশের হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হামজা। যিনি কোনো আতঙ্ক নয়, ফুটবলকে আলোর পথে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে তার সঙ্গী হয়েছেন অন্যরা। এভাবেই জেগে উঠবে ফুটবল। বাংলাদেশকে আলোর পথত দেখাচ্ছেন, অন্যরাও তা অনুসরণ করছেন। শঙ্কা কাটিয়ে সুদিনের অপেক্ষায় ফুটবল।’