মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ ফেলে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে গ্রহাণু ২০২৪ ওয়াইআর৪। প্রাথমিকভাবে ২০৩২ সালে চাঁদে এটির আঘাতের সম্ভাবনা ৪ শতাংশ থাকলেও সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী সেই সম্ভাবনা ৩০ শতাংশের বেশি বেড়ে যেতে পারে। নিউ সায়েন্টিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের একটি দল জানিয়েছে, আগামী বছর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের আসন্ন পর্যবেক্ষণের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাদের মতে, ৮০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে চাঁদে আঘাতের এই ঝুঁকি ১ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। তবে, ৫ শতাংশ সম্ভাবনাও রয়েছে যে এই ঝুঁকি বেড়ে ৩০ শতাংশের উপরে চলে যেতে পারে।
আগামী বছর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ এবং ২৬ তারিখে জেমস টেলিস্কোপে সীমিত দেখার সুযোগ মিলবে। এই সময়েই গ্রহাণুটির গতিপথ এবং এই নিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হবে। গ্রহাণুটির ব্যাস ৫৩ থেকে ৬৭ মিটার, যা মোটামুটি একটি ১০ তলা ভবনের সমান।
২০২৪ সালে যখন এই গ্রহাণুটি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসার খবর প্রকাশিত হয়েছিল, তখন এটি মহাকাশপ্রেমীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। গ্রহাণু ২০২৪ ওয়াইআর৪ প্রথম আবিষ্কৃত হয় ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর চিলিতে অবস্থিত অ্যাস্টেরয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০৩২ সালের ২২ ডিসেম্বর এটি পৃথিবীতে আঘাত হানার ১ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে, যা পরে সামান্য বেড়ে ৩.১ শতাংশ হয়। তবে, পরবর্তী পর্যবেক্ষণের পর নাসা এই সিদ্ধান্তে আসে যে ২০৩২ সাল বা তার পরে এই বস্তুটি পৃথিবীর জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না।
কিন্তু চাঁদকে আঘাত করার আশঙ্কা বাড়ায় বিজ্ঞানীরা এখন সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং পৃথিবীতে বড় ধরনের ক্ষতি করবে না, তবুও চাঁদে আঘাতের পরিণতি পৃথিবীর জন্য বিশাল হতে পারে। এমন আঘাতের ফলে লক্ষ লক্ষ টন মহাজাগতিক ধ্বংসাবশেষ মহাশূন্যে নিক্ষিপ্ত হবে, যা উপগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। একই সঙ্গে এটি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান উল্কাবৃষ্টির জন্ম দিতে পারে এবং চাঁদে প্রায় ১ কিলোমিটার চওড়া একটি গর্ত তৈরি করতে পারে।
নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বর্তমানে সম্ভাব্য দিক পরিবর্তনকারী কৌশল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে, যার মধ্যে গ্রহাণুটির কাছে একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ করার মতো পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে, এখনো কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের পরিকল্পনা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেন, কোনো গ্রহাণুর আঘাত হানার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা মূলত এর আকারের উপর নির্ভর করে। ২০৩২ সালে ২০২৪ ওয়াইআর৪-এর পৃথিবীতে আঘাতের সম্ভাবনা ৩ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছানোয় এর আকার নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তারা আরও জানান, এর ইনফ্রারেড ক্ষমতার কারণে জেমস টেলিস্কোপ এই মূল্যায়নের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত, বিশেষ করে ডেকামিটার-স্কেলের বস্তুগুলোর ক্ষেত্রে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, ২০২৫ সালের মে মাসের পর ২০২৪ ওয়াইআর৪ কঠিন লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ২০২৬ সালের প্রথম দিকেই জেমস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণের আওতায় আসবে। চাঁদে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তা জানতে এই পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি-এর গ্রহ বিজ্ঞানী ড. অ্যান্ড্রু রিভকিন জানান, পর্যবেক্ষণগুলো অমূল্য। এটি ভবিষ্যতে অন্য কোনো গ্রহাণু সম্ভাব্য আঘাতের হুমকি সৃষ্টি করলে, জরুরি পর্যবেক্ষণের সময় আমাদের সবচেয়ে ভালো কৌশল নির্ধারণে সহায়তা করবে।"
সূত্র: এনটিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল