বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। সরকারি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং রাজস্ব ঘাটতির ফলে দেশটির আর্থিক ভারসাম্য চাপে পড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মোট সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ ট্রিলিয়ন ১৯ বিলিয়ন ৮১৩ মিলিয়ন ডলার। এই হিসেবে দেশটির প্রতি নাগরিকের ওপর গড়ে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার ডলার—এ তথ্য দিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক পিটার জি পিটারসন ফাউন্ডেশন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ঋণের পরিমাণ চীন, ভারত, জাপান, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির সম্মিলিত মূল্যের প্রায় সমান।
মাত্র দুই মাস আগেই, অর্থাৎ চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির মোট ঋণ ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ছিল ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার, আর ওই বছরের জুলাইয়ে ছিল ৩৫ ট্রিলিয়ন।
ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মাইকেল এ পিটারসন বলেন, “এক ট্রিলিয়নের পর আরেক ট্রিলিয়ন ঋণ যোগ করে সংকট থেকে সংকটে চলা কোনো উন্নত জাতির জন্য মানানসই নয়। এখনই সময় যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দায়িত্বশীল সংস্কারের পথে এগিয়ে আসার।”
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিজ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের মান ‘Aaa’ থেকে নামিয়ে ‘Aa1’ করে দেয়। তাদের ব্যাখ্যা, টানা বাজেট ঘাটতি ও বাড়তি সুদের বোঝা সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির প্রশাসন। এর আগে ফিচ ও স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস যথাক্রমে ২০১১ ও ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং নামিয়ে দেয়।
যদিও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কতটা ঋণ নিতে পারে আর্থিক স্থিতি না হারিয়ে, তবে সবার মত এক — বর্তমান ঋণের ধারা টেকসই নয়। ২০২৩ সালের এক বিশ্লেষণে হোয়াটন বাজেট মডেলের অর্থনীতিবিদেরা দেখিয়েছিলেন, যদি ঋণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০০ শতাংশ ছাড়ায়, তাহলে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে বড় ধস নেমে আসবে।
অন্যদিকে, কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের (CBO) পূর্বাভাস বলছে, ২০৪৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ জিডিপির ২০০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রণীত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’-এর আওতায় দেওয়া ব্যাপক করছাড়।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/আশিক