আদালতের রায়ের মাধ্যমে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হলেও বর্তমান সাংবিধানিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা প্রশ্নে শুনানিতে এসব কথা বলেন আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ আপিলকারীর আইনজীবী তিনি। আজও এ বিষয়ে শুনানির জন্য ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। শুনানির সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এর আগে গত মঙ্গলবার প্রথম দিনের মতো আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে আইনজীবী শরীফ ভূইয়া বলেন, বিচার বিভাগের যেভাবে কাজ করার কথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সেভাবে কাজ করেনি। তারা বিচারিক ক্ষমতার বহির্ভূত কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ এই রায় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের সংসদের বা নির্বাহী বিভাগের কাজও করে ফেলেছে। তারা ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বা এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, যার ফলে এটা রায়ের একটা ভুল দিক। তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এলেও আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠন করতে হবে না এবং এটা করা সম্ভবও হবে না। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা করার যেই বিধান ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সংবিধানের এ সংক্রান্ত বিধান মতে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করতে হলে এবং ওই রকম একটা সরকার গঠন করতে হলে এটা শুধু সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে করা সম্ভব। আমাদের সংসদ কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় আগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই বিধান এখানে প্রযোজ্য নয়।
১৪ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। পরে এ রায় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট আবেদন করেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি।
পরে ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পাঁচ দিন পর ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া আরেকটি আবেদন করেন নওগাঁর রানীনগরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন। এরপর আরো দুটি আবেদন করা হয়।
রিভিউ আবেদনে আপিল করার অনুমতি দিয়ে আপিল শুনানি হবে, নাকি রিভিউ আবেদনেই চূড়ান্ত শুনানি হবে, এ নিয়ে দুইদিন শুনানির পর গত ২৭ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত জানান। ছয়টি আবেদনের মধ্যে একটি আবেদনে আপিলের অনুমতি দিয়ে চারটি আবেদন এর সঙ্গে যুক্ত করে দেন আপিল বিভাগ। অন্য আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ (আউট অব লিস্ট) দিয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার শুনানি শুরু হয়।