ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য, সাবেক এমপি আবদুল কাদের আজাদ ওরফে এ কে আজাদের গ্রেপ্তার দাবি করেছে এ জেলার ছাত্র-জনতা। গতকাল দুপুরে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে এ কে আজাদ তাঁর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন যা জুলাই আন্দোলনের পরিপন্থি। এই এ কে আজাদের নির্দেশক্রমে জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালানো হয়। এখনো ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ ও আহত অবস্থায় রয়েছে। তিনি এই জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের সঙ্গে তামাশা শুরু করেছেন। তিনি যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সরে না আসেন তাহলে তিনি যতই ক্ষমতাধারী লোক হন না কেন, যার আশীর্বাদ নিয়ে আসেন না কেন, আমরা ভুলে যাব তিনি ফরিদপুরের সন্তান। আমরা যখন জুলাই আন্দোলন করেছি ঠিক একইভাবে তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করব। অবিলম্বে এ কে আজাদসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগের দোসর এ কে আজাদ বিভিন্ন সময় দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রকাশ্যে গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমরা তাকে সতর্ক করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কথা শুনেননি। এ কে আজাদ গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তিনি নাকি আওয়ামী লীগ করেন না। অথচ তাঁর ডানে-বায়ে সবই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা থাকছেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায় এবং প্রকাশ্যে তিনি এসব করছেন। অথচ প্রশাসনের তরফ থেকে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ কে আজাদের এসব কর্মকাণ্ড শুধু রাজনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থি নয়, এটি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসনের সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা। আমরা জানতে চাই, ফরিদপুরের মাটিতে আবারও কি সেই স্বৈরাচার ও দমননীতির রাজনীতি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে? জনগণ আর কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ নামের সন্ত্রাসীদের পুনরুত্থান মেনে নেবে না। আজকের পর থেকে যদি এসব কর্মকাণ্ড চলতে থাকে তাহলে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটলে এর দায় প্রশাসন এবং এ কে আজাদকেই নিতে হবে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আসাদউজ্জামান আওয়ামী লীগের দোসরদের সহযোগিতা করছেন। কোতোয়ালি থানাকে মাছের বাজারে পরিণত করেছেন। (কার্যক্রম) নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করে সন্ধ্যা হলেই থানায় বিচার সালিশের নামে বাজার বসাচ্ছেন। যেহেতু এ কে আজাদ নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা তাই তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ২৪ জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য মেহেদী হাসান, সাইফ খান, ফারহান নাইব, তামজিদ সিওনসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে ‘এ কে আজাদের গাড়ি বহরে যুবদলের নেতা-কর্মীদের হামলা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর যুবদল। গতকাল বেলা ১টার দিকে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স হলে এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে ফরিদপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচনের স্বতন্ত্র এমপি এ কে আজাদের গাড়ি বহরের হামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা সাধারণ জনগণ ছাড়াও দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, সারা দেশে যুবদলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াসের একটি অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ কে আজাদ এ কাজ করেছেন যা তীব্র নিন্দনীয়। এ সময় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি রাজিব হোসেন, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক আলী রেজওয়ান বিশ্বাস তরুণ।