রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রপ্তানি খাত এবং বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অগ্নিকাণ্ডে আমদানি-রপ্তানির বিপুল পরিমাণ পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়া, ওষুধ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ও কৃষিজ পণ্য পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ১৫টি ইউনিট কয়েক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ হলো দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। এখানে এমন নিরাপত্তাহীনতা ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করবে। তারা ডেলিভারি বিলম্ব ও পণ্যের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। এরই মধ্যে কয়েকটি ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে জরুরি আপডেট চেয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আবারও সামনে এসেছে বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো পরিচালনায় আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেখানে পুরোনো সরঞ্জাম ও অপর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমানবন্দরের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল স্থানে এমন দুর্ঘটনা দেশের ভাবমূর্তির জন্য ভিন্ন বার্তা দেবে। আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি নেতিবাচক বার্তা পাঠাবে, যা আমাদের রপ্তানি ও বাণিজ্যিক সক্ষমতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন, কার্গো ভিলেজের আগুন আমাদের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার মারাত্মক দুর্বলতা উন্মোচন করেছে। একটি কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) এলাকায় এত দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ মজুত থাকে, সেখানে পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা চরম অবহেলার। কার্গো ভিলেজের আগুনের ঘটনায় আমাদের সক্ষমতা আবারও প্রশ্নের মুখে পড়ল।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা শুধু তাৎক্ষণিক ক্ষতিই ডেকে আনে না, বরং বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ‘বিশ্বের নির্ভরযোগ্য রপ্তানিকারক দেশ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থানে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তাই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা বাংলাদেশের রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবিলম্বে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, সুরক্ষা প্রটোকল এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেয়। এতে বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরির পাশাপাশি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা অনেক বছর ধরে অভিযোগ করে আসছি আমাদের পণ্য ও মালামাল খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়, সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই এবং প্রায় আমদানিকৃত মালামাল চুরি হয়। এটি শুধু ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।