পোশাক খাতে স্বস্তির খবর নেই। ক্ষমতার পট পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শ্রমিক আন্দোলন, জ্বালানিসংকটের কারণে বিগত এক বছরে দেশে ১৮৫টির বেশি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেকার হয়েছেন লাখের বেশি শ্রমিক। গত এক মাসে বন্ধ হয়েছে ২৪টির বেশি কারখানা। একই সময়ে বেকার হয়েছেন ৬৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। রপ্তানিতেও কমেছে পোশাকের জৌলুশ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ধারাবাহিকভাবে পোশাক রপ্তানি কমেছে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক নানান সমস্যায় পোশাক খাত এখন হুমকিতে। ব্যবসায়ীদের মতে, শিল্প উৎপাদন ও রপ্তানি টিকিয়ে রাখতে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। গত দুই দিনে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশে পোশাক রপ্তানি খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ। শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, কারখানায় হামলা ও কর্মপরিবেশ না থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায় তারা। কারখানাগুলো হলো- প্যাসিফিক জিনস-১, প্যাসিফিক জিনস-২, প্যাসিফিক অ্যাটায়ারস, প্যাসিফিক অ্যাকসেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ারকওয়্যারস, ইউনিভারসেল জিনস, এইচটি ফ্যাশন ও জিনস ২০০০।
এই আট কারখানায় ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। ২০ দিন আগে নাসা গ্রুপের ১৬টি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়, এতে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ১০টি, গাজীপুরে দুইটি, চট্টগ্রাম ইপিজেডে দুইটি এবং কুমিল্লা ইপিজেডে দুইটি কারখানা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে আত্মগোপনে চলে যান নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি এক্সিম ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কয়েকটি মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার গ্রেপ্তারের পর থেকেই অস্থিরতা তৈরি হয় নাসা গ্রুপের কারখানাগুলোতে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাকি পড়তে থাকে। এরপর একে একে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরে আয়োজিত ত্রিপক্ষীয় সভায় মালিকের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এবং অন্যান্য পাওনা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, গত এক বছরে ১৮৫টি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। গ্যাস ও বিদ্যুৎসংকটের কারণে উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে; যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি খাতেও। গত দুই মাসে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ।